লোডশেডিংয়ে ব্যাঘাত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে

যথাযথ পদক্ষেপ দরকার

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

একদিকে দেশব্যাপী চলছে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিং। এই দুই মিলে যাপনচর্চাকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। দেশের উৎপাদনেও ফেলছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এই থেকে মুক্ত নয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক জরুরি বিষয়। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন। তবে এক্ষেত্রে রোগী ও শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তথ্য অনুযায়ী, লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীরা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। রাজধানীর বাইরে এ সংকট আরও তীব্র আকারে দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বিবেচনা করে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করেছে। মাধ্যমিকেও ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে মাধ্যমিকেও একই পন্থা অবলম্বন করে। পত্রিকায় বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদিকে প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি এড়াতে অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। তবে অনলাইন ক্লাস নেয়া যে টেকসই ব্যবস্থা নয়, তা করোনাকালেই স্পষ্ট হয়েছে। উপরন্তু অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট চালু রাখা দরকার, আর এজন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুৎ তো নিরবচ্ছিন্ন নয়। সব মিলে চিকিৎসা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বিদ্যুতের অভাবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। কারণ বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের ল্যাবের কাজ বন্ধ থাকে। এভাবে অনেক রোগীকেই ফিরে যেতে হয় হাসপাতাল থেকে। আবার অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লোডশেডিংয়ের কারণে পানি ওঠাতে সমস্যা হচ্ছে, ফলে হাসপাতালে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। আবার অনেক হাসপাতালের একটি জেনারেটর থাকলেও সেটি দিয়ে শুধু অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দিন-রাত অধিকাংশ সময় লোডশেডিং থাকার কারণে আইপিএস যে পরিমাণে চার্জ হয়, তা পুরো হাসপাতালের লোড নিতে পারে না। আরও জানা যায়, ওয়ার্ডে দিন-রাত অধিকাংশ সময় অন্ধকারে থাকে রোগীরা। মশা, গরম ও অন্ধকারে অতিষ্ঠ রোগীরা রুক্ষ ও তিক্ত আচরণ করছেন। হাসপাতালের টেস্ট, অফিসিয়াল কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে লোডশেডিংয়ের কারণে। এভাবে দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সার্ভিস ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে, আবার চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীদের ভোগান্তিও বাড়ছে। তবে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে এ সংকট বেশি তীব্র। পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘটছে বড় ধরনের ব্যাঘাত। অসহনীয় লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় তারা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় বন্ধ থাকছে লাইট-ফ্যান; এ অবস্থায় ক্লাস চালানো প্রায় অসম্ভব।

বলা যায়, প্রকৃতির রুদ্্ররোষ আর মানুষের তৈরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রকৃতিও আশা করা যায় নমনীয় হবে। তবে ক্ষত ঠিকই রেখে যাবে। করোনায় শিক্ষায় দারুণ ক্ষতি হয়েছে। স্বাস্থ্যের দৈন্যদশাও প্রকট হয়েছে। এখন সময় এসেছে পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার। শিক্ষা ঘাটতি প্রশমনের পাশাপাশির দুর্যোগকালীন স্বাস্থ্যসেবার কথাও ভাবতে হবে। এই নিয়ে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।