ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডিভোর্স বন্ধ হোক

সজীব কুমার রায়
ডিভোর্স বন্ধ হোক

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিষয় ডিভোর্স। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরোনো প্রেমের সন্দিহান। বিয়ের মাধ্যমে মানবজাতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করে, একাকিত্ব দূর করে। আগামী প্রজন্মের আগমন ঘটে। মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। একটি দেশ ও জাতির বিকাশ ঘটেছে বিয়ে ও প্রজন্মের যুবকদের হাত ধরে। মহা ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হয়ে থাকে উচ্চ শিক্ষিত ধনী-গরিব জাতি গোত্রের মধ্যে, আবার ডিভোর্স কার্যকর করার মাধ্যমে বিয়ের আনন্দের কবর রচনা করে থাকে দুঃখ বেদনা ও শোকের প্রতীক হিসেবে! ডিভোর্সের কিছু কারণ দেখতে গেলে অনেক কারণ দৃষ্টিগোচর হয়, যেমন- টিভি চ্যানেলের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন; বিয়ের আগের পুরোনো প্রেম, যেটা ভুলতে না পেরে এর প্রভাব পড়ে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে; যৌথ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা; যৌতুকের ছড়াছড়ি; উচ্চবিত্ত পরিবারের নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা; স্বামী ও স্ত্রী মাদকাসক্ত; পরকীয়া; শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সুসম্পর্কের অভাব; সামাজিক রীতিনীতি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা; সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসন; নারী নির্যাতন; নারীর প্রতি পারিবারিক সাপোর্ট ও কাউন্সেলিংয়ের অভাব; টিনএজারদের অবাধ মেলামেশা; উচ্চ শিক্ষিত নাগরিকদের বেহায়াপনার ছোবল; নারীদের কাছে শ্বশুরবাড়ি জেলখানা মনে করার প্রবণতা ডিভোর্সের অন্যতম কারণ।

ডিভোর্সটা শুধু স্বামী-স্ত্রীর ওপরে প্রভাব ফেলে না। তাদের একটা ভুল সিদ্ধান্তের ফলে দুটি পরিবারের একে অপরের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। সঙ্গে দোটানায় পড়ে যায় তাদের সন্তান। সন্তান তার স্বাধীন পরিচয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে না। কৌতূহল, অবসন্নতা ও বন্ধুদের লাঞ্ছনা তাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।

বর্তমানে ডিভোর্স টা হয়ে গেছে উঠতি বয়সি ছেলে খেলা। কথায় কথায় যেন তাদের প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটানোর মতো।

বর্তমান সরকার ডিভোর্স ব্যবস্থাকে আরও সহজভাবে করে দেওয়ায় এটা আরো বেশি অহরহ ঘটে যাচ্ছে। সরকারকে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যে, ডিভোর্সকে একটি জটিল প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া, যাতে এটি করতে গেলে অনেকগুলো জটিল ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং এটি তুলতে হলেও অনেক কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয়। এতে করে মানুষ ডিভোর্স দিতে গেলে হাজারবার ভাববে।

তালাকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, আগের চেয়ে নারীরা স্বাবলম্বী, স্বাধীন মনোভাব, নারীদের উচ্চ বেতনে চাকরি, আর্থিকভাবে সচ্ছলতা, নির্যাতন সহ্য না করা এবং প্রতিবাদ করার মনোভাবের কারণে তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। গত ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী দিনে গড়ে ৩৭টি তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গড়ে ৭০ শতাংশ আবেদন করছেন নারীরা। তালাকের আবেদনে সমঝোতা হচ্ছে গড়ে ৫ শতাংশেরও কম।

ডিভোর্স দেওয়া-নেওয়ার আগে ডিভোর্সের পর কী হবে, সেই বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। অনেকেই ভবিষ্যতের বিষয় না ভেবেই স্থূলবুদ্ধিতার জন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। দিনের পর দিন একসঙ্গে থাকতে থাকতে সঙ্গীর প্রতি একঘেয়েমি চলে আসা স্বাভাবিক। মনে হতে পারে আমরা একে অপরকে ছাড়া একাই ভালো থাকতে পারি। কিন্তু সম্পর্কে আবার স্পার্ক ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তাদের নিজেদেরই। দু’জনকে একসঙ্গে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। কীভাবে একে অপরের সম্পর্কে স্পার্ক ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। যদি কোনোভাবে তা সম্ভব না হয়, তবে দু’জনই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে এতে দু’জনের পরিবারের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা ভালো।

শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত