ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সিগন্যালের নেই আয়ুষ্কাল

রেলপথে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা
সিগন্যালের নেই আয়ুষ্কাল

রেলে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগের কথা সবার জানা। অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নও দৃশ্যমান। তবে যাত্রীসেবা নিরাপত্তা ও রেল সম্পদ রক্ষায় আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েই গেছে। বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরোনো ব্যবস্থার সিগন্যালে রেলে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথে সবচেয়ে দুর্বল-চরম ঝুঁকির নাম ‘সিগন্যাল ব্যবস্থা’। ৯০ শতাংশ সিগন্যাল পয়েন্টের আয়ুষ্কাল প্রায় অর্ধশত বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। আর নামমাত্র স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পয়েন্ট থাকলেও ‘ম্যানুয়ালি’ সিগন্যাল ব্যবস্থা একমাত্র ভরসা। তবে এতে বিন্দুমাত্র আস্থা রাখতে পারেন না মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সূত্রমতে, রেলে ছোট-বড় দুর্ঘটনার ৯৫ শতাংশই ঘটছে সিগন্যাল ব্যবস্থা ও রেললাইনের ত্রুটির কারণে। প্রকাশ, বছরে রেলে ৭০ থেকে ১৩০টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত রিপোর্ট বলছে, সিগন্যাল ব্যবস্থা ত্রুটির কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) তথ্য বলছে, এশিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ রেল অবকাঠামোর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। দেশে ১৯৩৭ সালের সিগন্যাল ব্যবস্থায় ট্রেন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে। বাস্তবে ট্রেনের সংখ্যা ও লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়ছে- কিন্তু সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে না। সিগন্যাল বিভাগে সবচেয়ে কম লোকবল। এ পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা হলেও ৭০ শতাংশের বেশি স্বল্পতা থেকে যাচ্ছে। ৩০ শতাংশ অদক্ষ লোকবল নিয়ে ট্রেন চলছে।

উল্লেখ্য, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের অধিকাংশ সেকশনে ব্রিটিশ আমলের সিগন্যাল ব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। আর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ সিগন্যাল ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। এতে উনিশ থেকে বিশ হলেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২২ জন নিহত এবং ১২০ জন আহত হন। গত ১৬ এপ্রিল কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায় ৭০ জন আহত হন। অবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা সংস্কার এবং সংশ্লিষ্টদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত এক যুগে ১৫৪টি নতুন ট্রেন চালু হলেও ট্রেন পরিচালনার অন্যতম অনুষঙ্গ সিগন্যাল ব্যবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর সূত্রে প্রকাশ, এখনো অনেক স্টেশনে তারের কুণ্ডলী দিয়ে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অথচ রেলওয়ের মাস্টারপ্লানে বলা আছে- আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে রেলপথে ট্রেনের গতি বাড়ানোসহ সার্বিক ট্রেন চলাচলের সক্ষমতা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। মাস্টারপ্লানে সেন্ট্রাল ট্রাফিক কন্ট্রোল (সিটিসি) ও কম্পিউটার বেজড ইন্টারলকিং (সিবিআই) সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অথচ দেশের ৪৮৪টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র ১২৪টি স্টেশনে সিবিআই ও সিটিসি সিগন্যাল ব্যবস্থা রয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

শুধু অবকাঠামো নয়, রেলওয়ের সার্বিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। মাস্টারপ্লানে সিগন্যালসহ যাত্রীসেবা-নিরাপত্তা বাড়াতে যে সব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে সেগুলো প্রতিপালন করতে হবে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রণালয় বা রেল বিভাগের দৃষ্টি শুধু বড় বড় প্রকল্পের দিকে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের দিকে ছুটছে। অথচ ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই। আর সিগন্যাল ব্যবস্থা ত্রুটির কারণেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানি ঘটছে। রেলের সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। সংগত কারণেই উন্নয়নের ধারণাটিই বদলানোর সময় এসেছে। দায়িত্বশীলদের অবশ্যই বাস্তবানুগ হতে হবে। আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত