অভিমত
আত্মহত্যা কি সমস্যার সমাধান হতে পারে!
সাকিবুল হাছান, শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমানে আত্মহত্যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, আত্মহত্যার কারণ ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত; কিন্তু কেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে এসে অসীম সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়েও একজন শিক্ষার্থী হতাশ হয়ে যাচ্ছে?
আত্মহত্যা মানে নিজেকে মেরে ফেলা। পৃথিবী থেকে নিষ্ঠুরভাবে বিদায় নেয়া। কেউ নিজের মাথায় গুলি করে, কেউ বিষ খেয়ে, কেউ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে, আবার কেউ উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
কেন জীবিত মানুষ নিজের হাতে নিজেকে খুন করে!
গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দিবাগত রাতে, ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তার ১ দিন আগে ৭ জুন মৌমিতা মোউ নামের আরেক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু আত্মহত্যা কি সমস্যার সমাধান!
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এই সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ১০১টি ঘটনা ঘটে।
সরকারি চাকরির ভেতরেই কি লুকিয়ে আছে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ? দেশের তরুণ সমাজ আর তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সরকারি চাকরি নিয়ে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে সেটি অভূতপূর্ব। দিন দিন সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের আগ্রহ যেন ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে।
ছেলেমেয়েরা কোনোমতে অনার্স কমপ্লিট করার অপেক্ষায় থাকে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী অনার্স ডিগ্রি নিচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার দেয়ার দেয়ার জন্য। শুধু বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য যদি ছাত্রছাত্রীরা অনার্স পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তাহলে এতসময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। ৪ বছর অনার্স করার কী দরকার? শুধু বিসিএস ক্যাডার হওয়া যদি জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্ট এ পরিবর্তন আনতে হবে।
মৌমিতা মৌ চিরকূট লেখেন ‘আমি ঢাবিতে চান্স পাইনি। আমার মা-বাবা আমার জন্য অনেক টাকা খরচ করে করেছে; কিন্তু আমি চান্স পাইনি, তাই তারা সমাজে মুখ দেখাতে পারছে না- তাই তিনি আত্মহত্যা করছেন’।
কিন্তু আত্মহত্যা কি সমস্যার সমাধান হতে পারে?
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানাবিধ সমস্যা থাকবেই। পরিবার ভেঙে যেতে পারে, সমাজ ও রাষ্ট্র সবার সমস্যার সমাধান নাও দিতে পারে। তাই বলে আত্মহত্যা সমস্যা থেকে মুক্তির পথ হতে পারে না।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় জ্ঞানার্জনের জন্য, গবেষণার জন্য, সেখানে আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, একটা ভালো চাকরির জন্য।
কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, তবে যদি একটি গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা যায়, তরুণদের মাঝে যদি ভালো প্রতিষ্ঠানের কর্মী হওয়ার পরিবর্তে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ তৈরি করতে পারে, তবে হয়তো কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের মানোন্নয়ন করতে হবে, এতে কোনো শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে শিক্ষকরা সহজেই বুঝতে পারবেন এবং হতাশা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে। কোনো শিক্ষক যেন কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ না হন, শিক্ষকরা যেন হন শিক্ষার্থীদের সব থেকে বড় আশ্রয়, স্বপ্ন গড়ার কারিগর। সর্বোপরি আমাদের একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে জীবনের জন্য স্বপ্ন, স্বপ্নের জন্য জীবন নয়।