এল নিনোর প্রভাব

সচেতন ও সতর্ক হতে হবে

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রকৃতির বদল আমরা কয়েক বছর ধরে প্রত্যক্ষ করছি। এবার তা প্রকট আকার ধারণ করেছে, তা হলো তাপমাত্রা। সাধারণত একটি দেশের তাপমাত্রা তথা আবহাওয়া ওই অঞ্চলের মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বহন করে। কিন্তু তাপমাত্রা এমনই বাড়ছে যে, নিজ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে অভিযোজন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্ব পরিমণ্ডলের সঙ্গে এক অস্বাভাবিক বিরূপ আবহাওয়ার আবর্তে পড়েছে বাংলাদেশ। দিনে দিনে চরমভাবাপন্ন এবং উষ্ণতা থেকে অতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল। জুনের শুরুতে এসে দেশের গড় তাপমাত্রা যেমন থাকার কথা ছিল, তেমন থাকেনি এবার। ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রতি বছর এই সময়ে গড় তাপমাত্রা থাকে ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে কিন্তু এখন তা রয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে গত দুই দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি নামলেও তাপদাহ বিদায় নেয়নি। এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তার বরাতে প্রকাশ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত দীর্ঘ তাপপ্রবাহ আর দেখা যায়নি। উদ্ভুত পরিস্থিতি সামলাতে এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

আবহবিদরা বলছেন, শিগগিরই গরম কমছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে এদেশে আরও ঘন ঘন, তীব্র ও দীর্ঘতর তাপপ্রবাহে অবদান রাখছে জলবায়ু পরিবর্তন। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে গরিব মানুষ। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে অনেকে চিকিৎসার শরণাপন্ন হচ্ছেন। এদিকে এজেন্সি ফ্রান্স প্রেস ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন ফিরে আসছে ভয়ংকর এল নিনো। এল নিনোর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। এটি সারা বিশ্বের জন্যই আশঙ্কার সংবাদ। কৌতূহল জাগতে পারে, এল নিনোর প্রভাব কি? বিজ্ঞানীরা জানান, মূলত অজ্ঞাত কারণে সমুদ্রের পানি গরম হয়ে যাওয়া ও উপকূলীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াই আবহাওয়ার বিচিত্র দশা- এল নিনোর প্রভাব। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, নীলাভ স্রোতরাশি শীতল নয়, বরং সাগরের এ পানি ফুটছে টগবগ করে। প্রকৃতির এই বিচিত্র দশার নাম ‘এল নিনো’। ১৬ শতকে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের একদল জেলে প্রথম খেয়াল করেন এ উষ্ণ সমুদ্রজল। এরপর থেকে দুঃস্বপ্নের মতো পৃথিবীতে প্রায়ই ফিরে আসে এল নিনো দশা। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এল নিনো বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করে যেতে পারে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল নিনোর প্রভাব বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা দেবে খরা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে এবং ভারত, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের বর্ষা দুর্বল হয়ে বৃষ্টিপাত অনেক কমে যাবে।

আমরা যদি এল নিনো অবস্থায় বিরাজ করি তবে তা মানবজাতির জন্য বড় দুঃসংবাদ। বাংলাদেশের জন্য আরও বড় দুঃসংবাদ। কারণ আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছি। পরিবেশ সুরক্ষা ও সংরক্ষণে আমরা দারুণভাবে পিছিয়ে আছি। এ অবস্থায় আমাদের যথেষ্ট সচেতনতা এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রকৃতিবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা ঠিক যে, এল নিনোর মতো বৈশ্বিক দুর্যোগ রোধ করা সম্ভব নয়, তবে বিশ্ববাসী এ নিয়ে একত্রে কাজ করতে পারে- যাতে ক্ষতিটা ন্যূনতম হয়। আমাদের উচিত হবে প্রকৃতিবিরোধী নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া। প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর যথাসম্ভব অবিকৃত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই নিয়ে সরকারকে অবশ্যই আমূল ভূমিকা রাখতে হবে।