কুরিয়ার-পার্সেলে মাদক ছড়াচ্ছে!

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী, গণমাধ্যমকর্মী

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে এখন মাদকের সয়লাব। পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীরাও এই মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ দরিদ্রতা। দেশে যে হারে দরিদ্রতা বাড়ছে, সেখানেই মাদকের রমরমা ব্যবসাও চাঙা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মধ্যেও সততার অনেক অভাব। দেশে এখন দেশি-বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেলে মাদক আসা-যাওয়া করছে। বিমানবন্দর হয়ে বিদেশ থেকে আসা পার্সেলে বিপুল পরিমাণ ভয়ানক মাদক দেশে ঢুকছে যা দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের সরকারি বাসা থেকে ভয়ংকর মাদক উদ্ধারের পর তিনি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সরকারি লোকজন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ এরই মধ্যে মাদক চালান ও বহনে বেশ তৎপর। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত বা বর্ডার এলাকা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও, রেলপথ এবং বাসে নিরাপদে মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করা দূরূহ হয়ে পরেছে। এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক হলেও রক্ষকই তো ভক্ষক। এই সেদিন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে একটু রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে রেস্টুরেন্টের স্মোকিং জোনে তরুণদের সঙ্গে তরুণীদের সিগারেট ও মাদক গ্রহণের মহোৎসব দেখে আমি নিজেই হতবাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর সুন্দর শিক্ষার্থীরা যেভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পরেছে তা ভবিষ্যতের জন্য অনশিসংকেত। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মাদক চোরাকারবারিরা ইন্টারনেটে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা করছে। লোকাল মাদক ব্যবসায়ীরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ডিএমটি, এলএসডি, ডিওবি, কুশ, স্কোপলোমিন, মলি ফেন্টানিলসহ আরও কিছু অপ্রচালিত মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কাস্টমস বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অহরহ দেশে নিয়ে আসছে, যা দেখার কেউ নেই। ভয়ংকর এসব মাদক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অচেনা ও অজানা। আমাদের দেশের বিমান বন্দরগুলোর কাছেও এ ধরনের মাদক অপরিচিত এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একবারে অনভিজ্ঞ। যার কারণে শিশু খাদ্য, খেলনা, ওষুধসামগ্রী, প্রসাধনী ও কেমিক্যাল সামগ্রী ইত্যাদির নামে পার্সেলে কুরিয়ার সার্ভিসে আসা এসব মালামাল বা পদার্থ যে ভয়ানক মাদক তা সহজে বুঝে উঠা দুষ্কর বা অসম্ভব। মাদকের ব্যবসায় অনেক বেকার তরুণ ও তরুণীরাও নেমে পরেছে। অনেক সময় ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে কায়দা করে চমক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে মাদক গ্রহণের জন্য আকর্ষণ করে থাকে। দেশে অভিনব কায়দায় মাদক বহন করা হচ্ছে, যা সহজে ধরা পড়া সম্ভব হয়ে উঠে না। সতর্ক করার পরও দেশি কুরিয়ার সার্ভিস বা অনলাইন ডেলিভারির মাধ্যমে মাদকের রমরমা ব্যবসায় নজরদারি আরও কঠোরভাবে বাড়াতে না পারলে দেশের তরুণ ও তরুণীরা ধ্বংসের পথে চলে যাবে, তখন কারও করার কিছু থাকবে না। এখনই যদি মাদক প্রতিরোধে সরকার এগিয়ে না আসে, তাহলে দেশের জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে পরবে। তবে নিরাপদে মাদক পরিবহনে যারা জড়িত তাদেও অনেকেই সরকারি লোকজন। এদের খুঁটির জোর শক্ত বলেই শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস এখনও শক্ত। এরপর মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর দিকে তাকান। একই অবস্থা সেখানেও সেবার নামে মাদকের ব্যবসা চলছে। চিকিৎসার নামে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর বেহাল অবস্থা। আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশ হতে ভয়াবহ মাদকের অস্থিরতা দূর করতে জোর তৎপরতা এবং সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।