ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা

ইন্টারনেটের দায়
শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা

শিক্ষার্থীদের অনেকে মানসিক সমস্যা, হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভুগছে- এমন তথ্য হরহামেশাই বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এর নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হয়। আরও কারণ অবশ্যই আছে, তবে এটি প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। সদ্য প্রকাশিত বেসরকারি আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব : কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি’ শীর্ষক এক সমীক্ষায়ও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে বলা হয়, মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী করেছেন ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন অবসর কাটাতে। ইন্টারনেটের অপরিমিত ব্যবহারের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনেও প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনায়। উল্লেখ্য, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ১৩ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর বয়স ১৬ থেকে ১৯ বছর, ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছর। বয়স বিবেচনায় দেখা যায়, এরাই হলো আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিন্ডে, যাদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক লাভের সম্ভাবনা দেখছে। এরা মানসিক সমস্যায় ভুগলে দেশের ভবিষ্যৎ শুভ হবে না। জরিপে অংশ নেয়া ৭২ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, তারা জীবনে কখনও না কখনও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। আর এদের বেশিরভাগই এর পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকাকে ইঙ্গিত করেছে।

অনেকেই অনুমান করেন, করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে অনেকে ইন্টারনেটে ঝুঁকে পড়ে। কারণ তখন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। খেলাধুলা ও অবসর কাটানোর বিষয়াদি সীমিত হওয়ার ফলে স্মার্টফোন বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। সমীক্ষায় ওঠে আসে পড়াশোনার কাজে ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে অতিরিক্ত আসক্তি তাদের পড়াশোনার মনোযোগ নষ্ট করছে। ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আসক্তি অনুভব করেন। সমীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। আর শিক্ষার্থীদের ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশের প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিমিত ঘুম না হওয়ার পেছনে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছেন। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির বিষয়ও উঠে এসেছে। ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয়-সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখেন। সমীক্ষায় ওঠে আসা তথ্যগুলো নিঃসন্দেহে তারুণ্যের ভবিষৎ নিয়ে আমাদের সংশয়াক্রান্ত করে। এদিকে বিষয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মানসিক অসুস্থতা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের বড় অংশ প্রোডাক্টিভ কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে তাদের কাছে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক চর্চাও আগের চেয়ে কমে গেছে।

আমাদের জীবনের সর্বত্র প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। এটা আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখতে চাই। তবে তা কতটুকু নৈতিক ও শিষ্টাচার মেনে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে যে, বয়সে তরুণ ফোন নিবন্ধনের অধিকার অর্জন করে না, সেই বয়সেই তারা যথেচ্ছভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করছে, ক্ষেত্রবিশেষে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে ভুগছে মানসিক সমস্যায়, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ জরুরি। এজন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অধিকহারে নিয়োজিত রাখতে হবে। ডিজিটাল লিটারেসি সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে হবে। বিভিন্ন উদ্দীপনাময় কর্মে তাদের নিযুক্ত করতে হবে। এ নিয়ে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ ও সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত