ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করি

মাহমুদুল হক আনসারী, সংগঠক, গবেষক, কলামিস্ট, [email protected]
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করি

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলি। প্রকৃতি ছাড়া মানুষ বাঁচে না। পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। সাধ্যমতো সব বয়সের মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণের আগ্রহ তৈরি করতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে এসময়ে বৃক্ষরোপণের জন্য তাদের মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি রাখা চাই। বৃক্ষকে ভালোবাসার জন্য তাদের মধ্যে নানা জাতের চারা সম্পর্কে জ্ঞান দান করা কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হওয়া উচিত। বৃক্ষকে আমাদের পরিবেশের জন্য সাথী করে রাখতে হবে। সামাজিকভাবে বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমাদের পরিবেশ আমাদের সমাজ। পরিবেশ ছাড়া সমাজ ঠিকে না। তাই পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখার আন্দোলন জোর দার করতে হবে।

বাংলাদেশের গাঁ-গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। রাস্তার দু’পাড়ে সারিবদ্ধভাবে স্থানীয় জনপ্রশাসনের মাধ্যমে গাছ লাগানো যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারে। বন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর সবুজ বনায়নের জন্য নিশ্চয় কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এ কর্মসূচিকে এটি আরও বেগবান এবং গতিশীল করতে পারে। দুনিয়াব্যাপী প্রকৃতির যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার হচ্ছে তা থেকে রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ আঙিনায় যে পরিমাণ খালি জায়গা থাকে, সেখানেই গাছ লাগানো দরকার। গাছের চাহিদা প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমানে গ্রাম থেকে শহর সব খানেই বলতে গেলে বৃক্ষশূন্য।

বৃক্ষনিধন যে পরিমাণে হচ্ছে, তার তুলনায় আমরা গাছ রোপণ করছি না। নিজস্ব আঙিনা থেকে যেভাবে গাছ নিধন হচ্ছে। পাহাড় জঙ্গলে যত ধরনের গাছ বৃক্ষ ছিল, সেগুলোও এখন প্রায় হারিয়ে গেছে। পাহাড়ে এখন সেই বড় বড় গাছের বাগান সংরক্ষণ দেখা যায় না। পাহাড়ের বনজ সম্পদ বৃক্ষগুলো রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় থাকলে ও বৃক্ষ নিধন কোনোভাবেই থামছে না। উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। তার সঙ্গে বনের পশু পাখিও সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে পরিবেশ পাহাড় পর্বত গাছপালা ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে। সমাজ এভাবে চলতে পারে না। একটি পরিবেশসম্মত আদর্শিক রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই পাহাড় পর্বত নদী-নালা, খাল-বিল ও জীববেচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য সরকারের ব্যাপক কর্মসূচি পরিকল্পনা থাকলে ও বাস্তবে পরিবেশের কোনো দৃশ্যমাণ অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।

আজকের এ সময়ে চারা রোপণ আন্দোলনকে সবার মধ্যে একটি আন্দোলনের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করতে হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তি, পরিবার সবাইকেই বৃক্ষরোপণ আন্দোলনে শরিক হওয়া সময়ের দাবি। আমার জন্য আপনার জন্য সবার জন্য, যার যার অবস্থান থেকে একটি করে গাছ যদি আমরা রোপণ করি, তাহলে আজকের ও আগামীর প্রজন্ম একটি সুন্দর পরিবেশ ও সুন্দর দেশ পাবে। আমি আমরা আগামী প্রজন্ম সুস্থ থাকবে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে নাগরিক হিসেবে সব পেশা ও শ্রেণির জনগণকে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। গাছ শুধু রোপণ করলেই হবে না। তাকে যত্নের মাধ্যমে দেখবাল করতে হবে। পরিচর্চা করতে হবে। তবেই গাছটি বড় হবে। সম্পদে রূপান্তরিত হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবেশ এবং আর্থিক উপকার দেবে। গাছকাটা ও পরিবেশবিরোধী আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। গাছ ও পরিবেশকে ধ্বংসকারী সে যত বড়ই ক্ষমতাবান হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। সমাজের জন্য পরিবেশ ধ্বংসকারী ব্যক্তি বড় অপরাধী। তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করুন। পাহাড় নদী গাছপালা বনাঞ্চল নিজ নিজ অবস্থানে থাকার মতো মানুষ হিসেবে আমাদেরই সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আসুন, গাছ লাগানোর মাধ্যমে সমাজ পরিবেশ ও রাষ্ট্রকে সুস্থ রাখি এবং সুস্থ থাকি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত