ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গুর প্রকোপ

দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণ জরুরি
ডেঙ্গুর প্রকোপ

ফের ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। তবে এবার মাত্রা একটি বেশি বলেই বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে লক্ষ করা যাচ্ছে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। মৃত্যুও বাড়ছে। বলা হচ্ছে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। মৌসুম-পরবর্তী জরিপ, গত চার বছরের প্রথম ছয় মাসের আক্রান্তের সংখ্যা এবং বিগত ২২ বছরের আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, দেশে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর অপ্রত্যাশিত হারে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সরকারের দায়িত্বশীলরাও স্বীকার করছেন, বাংলাদেশে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর অপ্রত্যাশিত সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। দ্রুত রোগের বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। লক্ষণীয় যে, চলতি বছর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় সমান হারে ডেঙ্গুর সংক্রমণ চলছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। এ বছর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। মৌসুম শুরুর আগেই সেখানে ১ হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ জন।

উল্লেখ্য, দেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। ওই বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত এবং ১৭৯ জন মারা যায়। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হিসাবে শীর্ষে আছে ২০২২ সাল। এ বছর আক্রান্ত হয় ৬২ হাজার ৩৮২ জন, মারা গেছে ২৮১ জন। বিগত ২২ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণে ছিল ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১৪ সালে। এই সময়ে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। এদিকে চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ জন রোগী, মারা গেছে ২৬ জন। আর চলতি জুনের প্রথম ১২ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ জন। তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি জড়িত। তবে আমাদের অসচেতনতা এর জন্য কম দায়ী নয়। এখন বর্ষায় যেমনি এডিশ মশা, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশা সমানতালে রোগ ও যন্ত্রণা বিস্তার করে চলছে। কর্তৃপক্ষ মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে মশার উপদ্রব কমছে না। বরং ডেঙ্গু রোগের বিস্তার বেড়েই চলছে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বছরে এডিশ মশার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনটি জরিপ করে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। জরিপের ফলের ভিত্তিতে মশা নিয়ন্ত্রণ ও নিধনের ব্যবস্থা নেয়া হয় কি? বাস্তবে ডেঙ্গুর বাহক এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে, জনগণ হবে এখানে অংশীজন। গণমাধ্যমের কল্যাণে ডেঙ্গু বিষয়ে মানুষের জানাশোনা হয়েছে, এখন প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা। এডিশ মশার বিস্তারের উপায়গুলো বন্ধ করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত