মসলার বাজারেও সিন্ডিকেট

পকেট কাটা হচ্ছে ক্রেতাদের

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ডিম, ব্রয়লার মুরগি, সয়াবিন, চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট এখন আলোচিত একটি নাম। এই নামের আড়ালে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী জিম্মি করছে বাজার, হাতিয়ে নিচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ। অথচ তাদের ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। এবার সিন্ডিকেটের নজর পড়েছে মসলার বাজারে, মূলত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এমন অপতৎপরতা। আর অজুহাত হিসেবে সামনে আনা হয়েছে ডলার পরিস্থিতি। পত্রিকায় প্রকাশ, ডলার সংকট আর আমদানিতে কড়াকড়ির অজুহাতে দেশের মসলার বাজার অস্থির করে তুলছে আমদানিকারকরা। এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। ফলে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মসলার বাজার। আদা, রসুন, জিরা, হলুদ, মরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জয়ত্রীসহ সব মসলার চাহিদা বাড়ছে। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানোর অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তারা। আমদানি করা মসলা গুদামে আটকে রাখারও অভিযোগ রয়েছে শতাধিক আমদানিকারকের বিরুদ্ধে। আর এসব ব্যবসায়ীর ইঙ্গিতেই মসলার দাম বাড়ে-কমে। এদিকে মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, জিরা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো মসলা পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। কিন্তু এর প্রভাব তো বাজারে পড়েইনি, বরং পকেট কাটা হচ্ছে ক্রেতাদের। বিষয়টি অনভিপ্রেত।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মসলার বাজার ঈদের আগে একটু বাড়তি থাকে। চাহিদা বেশি থাকায় তা কিছুটা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু বাড়ার পরিমাণ যখন অত্যধিক হয়, তা মেনে নিতে ক্রেতাদের কষ্ট হয় বৈকি! বাজারদর ও পাইকারি মসলা ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত তিন থেকে ছয় মাসে মসলা পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে জিরার দাম। স্মর্তব্য, মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের প্রধানতম গরম মসলার একটি জিরা। কিন্তু জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ ও এলাচের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি আসন্ন কোরবানির ঈদে ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে নির্দ্বিধায় বলা যায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ থেকে ৮৫০ টাকায়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এ জিরা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকার বেশি দামে। দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে তিন মাস আগেও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে জিরা, যা বর্তমান দামের চেয়ে প্রায় ৪৫০ টাকা কম। একইভাবে কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৫০০ টাকা, ৭০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০ টাকা, ১ হাজার টাকা বেড়ে জয়ফল ৩ হাজার টাকা, ২০০ টাকা বেড়ে মিষ্টি জিরা ৩১০ টাকা, ১৫০ টাকা বেড়ে গোলমরিচ ৬৭০ টাকা, ১৫০ টাকা বেড়ে জয়ত্রী ৭৫০ টাকা, ৭০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৩২০ টাকা, ৬০ টাকা বেড়ে ধনিয়া ১৮০ টাকা, ৫০ টাকা বেড়ে সরিষা ১০৫ টাকা এবং ২০ টাকা বেড়ে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এ ছাড়া সরবরাহ সংকটে চীনা আদা ও চীনা রসুনের দামও অস্থির। স্বাভাবিক সময়ে ১৫০-২৫০ টাকার মধ্যে শুকনা মরিচ বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ঠেকেছে ৪৫০-৫০০ টাকায়।

মশলার বাজার নিয়ে কারা কারসাজি করছে, নিশ্চয়ই তা প্রশাসনের অজানা নয়। তবে কেন চিহ্নিত সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। বরং বিভিন্ন সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীলরা হতাশাই প্রকাশ করেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সিন্ডিকেটের কাছে এহেন আত্মসমর্পণ কিছুতেই মেনে নেয়া যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অবশ্যই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সাধারণ মানুষ আরও জিম্মি দশায় পতিত হবে।