যে কোনো একটি দেশের অনুমিত আয় ও ব্যয়ের হিসাবকে বাজেট বলে। একটি দেশের নির্বাচিত সরকার কে দেশের যখন দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন সেই সরকারকে আগাম কিছু পরিকল্পনা করে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হয়। যেটি আসলে বাজেটের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রুপ পেয়ে থাকে।
স্বাধীন এই বাংলাদেশেও গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিবছর একটি আর্থিক পরিকল্পনা প্রদান করে বছরের মাঝামাঝি সময়ে। গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে এই বাজেট নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্থানে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের মন্তব্য শুরু হয়ছে। বিশেষত সল্প আয়ের মানুষদের কাছে এই বাজেট যেন অনেকটাই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে কেউ কেউ। কেননা বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের জন্য বাংলাদেশের আর্থিক বাজারেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি চলছে।
নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন এই বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে তেমনি শিক্ষার্থীরাও অনেকটা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। কেননা শিক্ষার প্রয়োজনীয় বেশ কিছু জিনিসের দাম এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন কলম, পেপার, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক জিনিসের দাম বৃদ্ধি।
বাজেটের তথ্য অনুসারে বল পয়েন্ট কলমে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে এই বছরের বাজেটে। এছাড়া টিস্যু পেপারসহ বিভিন্ন পেপারে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব করা হয়েছে। কলম ও পেপারের দাম বৃদ্ধি কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস হলো চশমা। প্রযুক্তির অতিব্যবহার, সুষম খাদ্য গ্রহণ না করা এরূপ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। যার মধ্যে চোখের সমস্যা অন্যতম। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা চশমা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে দিনদিন। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীই চোখকে ভালো রাখত চশমা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, চশমার ওপরও অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিকের আধিপত্য বেশ। শিক্ষা ক্ষেত্রেও দেখা যায় এর আধিপত্য। যেমন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বোর্ড, টিফিন বক্স, পানির পট, স্কেল আরো অনেক জিনিসই প্লাস্টিকের তৈরি, এসব জিনিস প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয়। ফলে নিত্যদিনই ক্রয় করতে হয়। কিন্তু বাজেটে প্লাস্টিকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন এসব শিক্ষা উপকরণও অধিক দামে কিনতে হবে। তবে প্লাস্টিকের দাম বৃদ্ধিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে না বরং ইতিবাচক প্রভাবই পড়বে। কেননা প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহারে শরীরে রোগ-জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে আর পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্লাস্টিকের দাম বৃদ্ধি সমাজের সব স্তরেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা যায়।
মাঠ পর্যায়ে বা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে সার্বিক বিচারে এই বাজেট কিছুটা নেতিবাচক পড়বে বলেই মনে হয়। তার কারণ হলো, শিক্ষা উপকরণ এখন আর শিক্ষার্থীরা কম মূল্যে ক্রয় করতে পারবে না।
আর্থিক সংকটাপন্ন পরিবারগুলো শিক্ষার খরচ বহন করতে কিছুটা হলেও ব্যর্থ হবে বলে ধারণা করা যায়।
সামষ্টিকভাবে এই বছরে নতুন বাজেটে শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ তুলনামূলক কমে গেছে। কেননা তথ্য অনুসারে, সম্প্রতি ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির তুলনায় ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি দেশের মোট বাজেটের কতটুকু অংশ বরাদ্দ দেবে এই সম্পর্কে ইউনেস্কোর পরামর্শ হলো, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত।
তবে আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা শিক্ষা খাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
সামষ্টিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ তা যথোপযুক্ত। প্রতিবছরই সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা বাজেট বরাদ্দ দিলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে নানান ধরনের সংকট চোখে পড়ে। এর মূল কারণ অবশ্য সঠিক তদারকি না করা। কাজেই পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা বাজেট দেওয়ার পাশাপাশি সঠিক প্রশাসনিক তদারকি বাড়াতে হবে। তবেই সামগ্রিকভাবে শিক্ষা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়