ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রাথমিকের শিক্ষক ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

মহিমা ইসলাম রিমি
প্রাথমিকের শিক্ষক ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। জাতির মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। শিক্ষার ভিত যাদের হাতে, তাঁদের যদি যথাযথ মর্যাদা দেওয়া না হয় তাহলে প্রকৃত শিক্ষা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল্যায়নে বিসমিল্লায় গলদ দেখা যায়। তার বড় প্রমাণ তাদের বেতন একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সমান। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে যা খুবই নূন্য। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সর্বসাকুল্যে ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা এবং প্রধান শিক্ষক ২০ হাজার ৮২৫ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন, যা বর্তমান বাজার মূল্যে অপ্রতুল। দ্রব্যেমূল্যের দাম ও জীবনযাত্রার মান যেভাবে বাড়ছে সে অনুযায়ী বাড়ছে না তাঁদের বেতন। নিম্নজীবনমান যেন তাদের খণ্ডকপাল করে রেখেছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক দিকটি বাদ দিয়ে সামাজিক মর্যাদার দিকটি লক্ষ করলেও চোখে পড়ে দীনতা। সমাজ যেন তাদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবেই দেখে! সেজন্য একজন স্নাতক সম্পন্ন বা উচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন তা কল্পনায়ও আনতে নারাজ। উন্নত জীবন ও প্রকৃত মূল্যায়ন পাওয়ার আশায় এই পেশা থেকে বিমুখ তরুণরা। এই পেশায় নিয়োজিত হয়ে সমাজ থেকেও যথাযথ সম্মান না পেয়ে হতাশ তারা।

প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা সব পেশার ঊর্ধ্বে। আমাদের দেশের তুলনায় ভিন্ন চিত্র দেখা যায় উন্নত বিশ্বে। এক সমীক্ষায় শিক্ষকতায় সবচেয়ে মর্যাদা পাওয়া ১০টি দেশের নাম উঠে এসেছে। এগুলো হচ্ছে- চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। চীনে সবচেয়ে মর্যাদা দেয়া হয় শিক্ষকদের। কোরিয়ায় শিক্ষকদের মন্ত্রীর সমান সম্মান দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে শিক্ষকদের বিশেষ সুবিধা। জাপানে সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করা যায় না।

কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির খোলনলচে পাল্টানোর সময় এসে গেছে। বইয়ের পাতা থেকে বের হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান আর মর্যাদা দিতে হবে এখন বাস্তবে। সম্মানজনক বেতন, গ্রেড ও মর্যাদা দিয়ে তাঁদের সামাজিক নেতৃত্বস্থানীয় জায়গায় আনতে হবে। উন্নত বিশ্বে অনেক পিএইচডিধারীরা যেমন এই পেশা গ্রহণ করেন, আমাদের দেশেও যেন এমনটি হয় সেই মনমানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সরকারের যাথাযথ নীতিমালাই পারে এই অসাধ্য সাধন করতে।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত