ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশের স্বাস্থ্য খাত ও এসডিজি

জিহাদ হোসেন রাহাত
দেশের স্বাস্থ্য খাত ও এসডিজি

দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুর দিয়েই শুরু করছি বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য সমাচার। ভৌগোলিক ব্যাপ্তি কিংবা জ্ঞানীদের আতুড়ঘর যা-ই বলি না কেন প্রকৃতির লক্ষ্মী রুপ আর দেশ সেরা ইতিহাস বিখ্যাত লক্ষ্মী সন্তানদের এলাকা এটি। চিরায়ত প্রকৃতির সুন্দর রূপ, সূর্য সন্তানরা এ জেলার গর্ব অহঙ্কারের অন্যতম কারণ হলেও সেই গর্বও যেন এখন কলঙ্কিত। কে দিয়েছে আমাদের গর্বের জায়গায় কালো দাগ? চলুন খুঁজি তার উত্তর। এখানকার স্বাস্থ্য খাতে বিরাজ করছে বিরাটাকার সিন্ডিকেট। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেলেনা যথাযথ সেবা। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলো মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। রয়েছে যথাযথ নজরদারির অভাব। শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই নয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। নীতিমালায় সরকারি হাসপাতালের নির্দিষ্ট একটি সীমানার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে না কোনো বেসরকারি হাসপাতাল- এমন নিয়ম থাকলেও স্থানীয় সিন্ডিকেট সেটি করছে থোড়াই কেয়ার। জেলার রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ বিশ বছরের বেশি সময় যাবৎ বন্ধ রয়েছে এক্স-রে সেবা।

একই উপজেলার হায়দারগঞ্জ উপশহরে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও রয়েছে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। তাছাড়া জেলার বাকিসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সেবা প্রদান চলছে বেহাল দশায়। ওয়াশরুম অপরিচ্ছন্ন, হাসপাতাল ভবনের চারপাশে ময়লার ভাগাড় নিয়ে চলছে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের খোঁড়া পায়ের দৌড়। রয়েছে চিকিৎসক সংকট। অবশ্য এমন চিত্র যে শুধু লক্ষ্মীপুরের, তা কিন্তু নয়। দেশের সার্বিক চিত্র এটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি এক হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য চারজনের বেশি চিকিৎসক, নার্স প্রয়োজন। অথচ চরম দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে আছে একজনের চেয়ে সামান্য বেশি। ডব্লিউএইচও পরিসংখ্যান-২০২২-এর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবার জনবলে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যান বলছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ দাবিদার এ দেশটি এক্ষেত্রে আফগানিস্তানের থেকে একধাপ এগিয়ে আছে। অথচ খাতে আমাদের চেয়ে ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও সম্প্রতি দেউলিয়াত্বের শিকার হওয়া শ্রীলঙ্কা রয়েছে এগিয়ে।

এ দেশগুলো অর্থনীতির দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে তেমন এগিয়ে না থাকলেও স্বাস্থ্য খাতে আমরা রয়েছি তাদের থেকে পিছিয়ে। বর্তমানে দেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ২৩ শতাংশ বহন করে সরকার বাকি ১০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। দুঃখের বিষয় হলো, এই পরিমাণ ব্যয়ের ১০ শতাংশ সেবাও পায় না সাধারণ জনগণ। যার একমাত্র কারণ, এই সেক্টরে লাগামহীন দুর্নীতি। হিসাব করলে আমাদের দেশের মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রায় ২৭ মার্কিন ডলার। আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য যে, এ পরিমাণ বরাদ্দ বিশ্বে সর্বনিম্ন। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে এটি ৬১ ডলার, মালয়েশিয়ার মতো দেশে সেটি প্রায় ৪১০ ডলার। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বলছে, একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য এ খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ ৪০ ডলার হওয়া প্রয়োজন। উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেও সরকারি উদ্যোগে এ খাতে বাকি ১৩ ডলার নিশ্চিত করতে পারছি না আমরা। যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সে পরিমাণ সেবাও পায় না সাধারণ জনগণ।

স্বাস্থ্য খাতের এমন বেহাল দশায় আমরা কী পারব টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মাইলফলক স্পর্শ করতে? না, পারব না। এমন দুর্নীতি আর নাজেহাল অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্ব দরবারে ২০৩০ সালের আগেই কাটা পড়ে বাংলাদেশের ‘সম্মান’ নামক নাক। স্বাস্থ্য খাতে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। অন্তত বাংলাদেশের সম্মানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং জনবল নিয়োগের পাশাপাশি দুর্নীতি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তরুণ কলামিস্ট

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত