বিষাক্ত হাতিরঝিলের পানি

পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন জরুরি

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নয়নাভিরাম হাতিরঝিলে নগরবাসীর অনেকেই আসেন মুক্ত বাতাসের শ্বাস নিতে। বৃক্ষছায়ায় আচ্ছাদিত এই এলাকাটি ভ্রমণপিপাসুদেরও প্রিয় জায়গা। হাঁটাহাঁটি, ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন এখানে। লেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি অনেকে নিছক নৌভ্রমণের আনন্দ নিতে এখানে আসে। সত্যি বলতে কী, এলাকাটি এখন নগরবাসীর জন্য অন্যতম প্রধান স্বস্তিকর জায়গা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মাঝেমধ্যে এলাকাটি দুর্গন্ধে অসহনীয় হয়ে ওঠে, স্বস্তির শ্বাস নিতে এসে ভ্রমণপিপাসু মানুষ নাকেমুখে রুমাল চেপে এলাকাটি দ্রুত পরিহার করতে পারলেই যেন বাঁচে। বর্তমানে তেমন অবস্থা বিরাজমান। হাতিরঝিলের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ঝিলজুড়ে দূষিত পানির উৎকট গন্ধের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রয়েছে মশার যন্ত্রণাও। নেই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। প্রতিনিয়ত বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য, শিল্পের বর্জ্য আর কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তের পানি ঢুকছে হাতিরঝিলে। ফলে নোংরা হচ্ছে হাতিরঝিল; পরিবেশ দূষণ হয়ে বাড়ছে দুর্গন্ধ। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আসা দর্শনার্থী ও পথচারীরা নাকে রুমাল চেপে ঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। লেকে হাজারো মাছ মরে পড়ে আছে। মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মীরা মরা মাছ তুলে লেকের পাড়ে মাটিচাপা দিয়েছেন। তার পরও পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। মরা মাছ সবচেয়ে বেশি ভেসে উঠছে হোটেল সোনারগাঁওয়ের পেছনের অংশে। ঝিলের অন্য স্থানগুলোতেও দু-একটি মরা মাছ ভাসতে দেখা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, হাতিরঝিলের কারওয়ান বাজারের অংশ ভরাট করছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশনের কাছে ভরাট করা হয়েছে। এ অংশের পিলার তুলতে লেকের একটি অংশ ভরাট করা হবে। যে কারণে লেকের এ অংশ একটি বিচ্ছিন্ন ডোবায় পরিণত হয়েছে। মাটি ভরাট করে ঝিল বন্ধ করে দেওয়ায় পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। তাই মাছ মারা যাচ্ছে। বস্তুত মাটি ভরাটের পর থেকেই সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের পানির গুণগত মান খারাপ হতে থাকে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয় বলেই প্রতীয়মান। কারণ আগেও অনুরূপ ঘটনা হাতিরঝিলে লক্ষ করা গেছে। সূত্রমতে, গুলশান লেক, কারওয়ান বাজার ও বেগুনবাড়ী দিয়ে হাতিরঝিলের পানিতে প্রতিনিয়ত ঢুকছে ময়লা পানি। দূষিত পানির ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলছে ওয়াটার ট্যাক্সি। এ থেকে সৃষ্ট ঢেউয়ের কারণে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় নাকাল দর্শনার্থী-পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দারা। এ ছাড়া পানিতে সবসময় পচা ময়লা-আবর্জনা ভাসতে দেখা যায়। তা ছাড়া লেকজুড়ে পানিতে ভাসতে দেখা যায় গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা, দর্শনার্থীদের ফেলা বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট, পানির বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা। কয়েকটি ড্রেন দিয়ে আশপাশের এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। অর্থাৎ মানুষের অসচেতনতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি হাতিঝিলের মতো একটি প্রকল্প দূষণে কম দায়ী নয়।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। এ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ৩১১ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন এ এলাকাটি নগরবাসীর গর্ব ও স্বস্তির জায়গা। তাই এর মহিমা ও স্বতন্ত্রতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। উন্নয়ন সবাই চায়, তবে ভরাট করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা অন্যায়। দ্রুত হাতিরঝিলের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীলরা আরও তৎপর হবেন- এটাই প্রত্যাশা।