ওষুধ সংরক্ষণ

মানসম্পন্ন হওয়া দরকার

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ওষুধ মানসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে গুণাগুণ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে। এজন্য হাসপাতাল-ফার্মেসিতে ওষুধ সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা থাকা দরকার। অর্থাৎ, শুধু মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি করলেই হবে না, ভোক্তার হাতে ওষুধ পৌঁছতে হবে মান অক্ষুণ্ণ রেখেই। সুখবর যে, ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, অধিকন্তু বিদেশে রপ্তানিও হয়ে আসছে। পাশাপাশি ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটছে। আরেকটি অস্বস্তিকর খবর যে, এখানে হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে ওষুধ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা অপ্রতুল। অথচ ওষুধের মতো একটি সংবেদনশীল পণ্যের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা একটি বড় ফ্যাক্টর। দেশে চলমান দাবদাহে জীবন রক্ষাকারী ও জরুরি ওষুধে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। প্রকাশ, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য ওষুধও গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা ও বিক্রেতারা। ওষুধ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টিকে দেখছেন জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হিসেবে। তারা বলছেন, ওষুধ একটি সংবেদনশীল পণ্য। তাপমাত্রার কিছুটা হেরফের হলেই কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ্য, দেশের বাজারে প্রচলিত ওষুধের প্রায় ৯০ শতাংশই ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য। এসব ওষুধ ঠাণ্ডা ও শুকনো স্থানে আলোর আড়ালে রাখতে হয়। গরমের সময় দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও এখন তা ৪০ ডিগ্রিও অতিক্রম করছে। তথ্য অনুযায়ী, দেশের ওষুধের দোকানগুলোর সিংহভাগেরই নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। এ পরিস্থিতিতে ওষুধের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারছে না ফার্মেসিগুলো। একই সঙ্গে অধিকাংশ ফার্মেসির বিক্রেতারা ওষুধ সংরক্ষণের যথাযথ নির্দেশনা সম্পর্কেও জানেন না। পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও ওষুধ সংরক্ষণে শতভাগ নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিষয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা না হলে তার গুণাগুণ নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। কিছু অতিসংবেদনশীল ওষুধ রয়েছে, যেগুলো তাপমাত্রা বাড়লেই নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক, ব্লাড প্রডাক্ট ইত্যাদি। যেগুলো বায়োসিমিউলেশন প্রডাক্ট অর্থাৎ বায়োমলিকুলার ওষুধগুলো উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। আর বেশিরভাগ ওষুধই কেমিক্যাল প্রডাক্ট। তবে এখন ওষুধগুলো বায়োমলিকুলার করা হচ্ছে। বায়োমলিকুলার ওষুধের একটি বড় সমস্যা হলো এ ওষুধ একটু বেশি তাপমাত্রা পেলেই নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমাদের দেশের ওষুধের দোকানগুলোয় ওষুধ সংরক্ষণের যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তাপমাত্রা একটু বাড়লেই এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে এসব ওষুধ সেবন করাটা স্বাস্থ্যঝুঁকির। এমনকি অধিকাংশ হাসপাতালে টিকা রাখার জন্য রেফ্রিজারেটরেরও অপর্যাপ্ততা রয়েছে, বেশিরভাগ আবার নষ্ট। এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে ২৯৫টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার বেশি ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করছে। অ্যালোপ্যাথিকের ৩১ হাজার ওষুধ রয়েছে। এসব ওষুধ প্রায় ৪০০ মডেল ফার্মেসি, ৩২ হাজার মডেল মেডিসিন শপসহ মোট ২ লাখ ২ হাজার ৫২৮টি ওষুধের দোকানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এর মধ্যে মডেল ফার্মেসিগুলো নির্দিষ্ট নীতিমালার কিছুটা মেনে কার্যক্রম চালালেও বেশিরভাগই সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করছে না। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

শুধু ওষুধ প্রস্তুত করলেই হবে না, ওষুধের কার্যকারিতা রক্ষায় পরিবহন, বিপণন, মজুদ ও সংরক্ষণের প্রতিটি স্তরকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)সহ বিভিন্ন দেশে অনুসৃত নীতিমালা অনুযায়ী, ফার্মেসি, ওষুধ কারখানাসহ প্রতিটি স্তরে একইভাবে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। বিষয়টি আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। ফার্মেসি ব্যবসার মালিকদের ওষুধ সংরক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। ক্রেতাদেরও এই নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওষুধ যথাযথভাবে সংরক্ষিত হলেই কার্য়কারিতা বহাল থাকে। বিষয়টি সবাই গুরুত্বসহকারে দেখবে, এটাই প্রত্যাশা।