ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরুর লাম্পি স্কিন রোগ

নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে
গরুর লাম্পি স্কিন রোগ

দেশে গরুর খামার ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দু-একটি গরু পালনের মাধ্যমে নিজেদের সংসার চালাতে ব্রতী হচ্ছেন। বলা যায়, অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আনতে গরু পালন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই খাতে সরকারি-বেসরকারি ঋণও পাওয়া যাচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, অনেক পরিবার একমাত্র গরুটিকে নিজের সন্তানের মতোই যত্ন-আত্তি করে বড় করছে। এ অবস্থায় যদি গরু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তবে কষ্টটা হয় ভয়ানক। বাস্তবে এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে। পত্রিকায় প্রকাশ, পঞ্চগড়ে লাম্বি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। সুচিকিৎসার অভাবে অনেক গরু মারাও যাচ্ছে। উল্লেখ্য, লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ। এটি মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। আর এই রোগের প্রাদুর্ভাবে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে অনেক খামারি ও কৃষক বিপাকে। প্রকাশ, মাসখানেক আগে সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে দেখা দেয় গরুর প্রাণঘাতী এই রোগ। গ্রাম থেকে গ্রামে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রোগটি। গত এক মাসে জেলার পাঁচ উপজেলায় বহু গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুপ্রতি চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এরপরও সুস্থ করা যাচ্ছে না। সুচিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে গরু। তথ্য অনুযায়ী, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর উপজেলার কামাতকাজলদীঘি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি গরু মারা গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এ রোগে আক্রান্ত হলে গরুর বিক্রয় মূল্য কমে যায়।

রোগটির বিষয়ে গরুর মালিক ও খামারিদের ভাষ্য, শুরুতে গরুর সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি উঠছে। তারপর হাঁটু, গোড়ালি ও গলা ফুলে যাচ্ছে। গলায় পানি জমছে। জ্বর আর প্রচণ্ড ব্যথায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় আক্রান্ত গরু। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কেউ কেউ অন্যান্য সুস্থ গরুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করতে আক্রান্ত গরুকে মশারি দিয়ে আলাদা করে রাখছে। কিন্তু এর পরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এদিকে খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকদের ডাকলে সাড়া দেন না। আর এলেও তাদের বড় অঙ্কের ফি দিতে হয়। নিরুপায় হয়ে তারা গ্রামের পশু চিকিৎসকদের মাধ্যমে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর গ্রাম্য চিকিৎসকরা যে যার মতো ওষুধ প্রয়োগ করছেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটছে। এ অবস্থায় ঋণ নিয়ে গরু কিনে অনেকের ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আছে। এমনও লক্ষ্য করা গেছে, অনেক পরিবারে দু-একটি গরুই একমাত্র সম্পদ। গরু লালন-পালনের পর বিক্রি করে অনেকে সংসারের কাজে লাগায়। মেয়ের বিয়েতে খরচ করি। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিই। অনেকে দুধ বিক্রি করে নিত্যদিনের খরচ বহন করে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করে। তাই রোগে গরুটি মারা গেলে পড়তে হয় বড় সংকটে।

লাম্পি স্কিন রোগটি এখন পঞ্চগড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীরা বলছেন, প্রতিবছরই এই রোগে গরু মারা যাচ্ছে, কিন্তু রোগের প্রতিষেধক বা প্রতিকারে সরকারি উদ্যোগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমনকি যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের জন্য সহায়তার উদ্যোগও নেই। বিষয়টি অনভিপ্রেত। রোগটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ এটি অন্য জেলাগুলোতেও বিস্তার লাভ করতে পারে, যা হতে পারে এ খাতের জন্য বড় ধরনের আঘাত। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাম্পি স্কিন রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। আতঙ্কিত না হয়ে মশা-মাছি থেকে গরুকে নিরাপদ রাখতে হবে। গরুর শরীর ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে গরু খামারিদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। আর সরকারি প্রাণিসম্পদ বিভাগটি এ নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত