বেকারত্ব নিরসনে করণীয়

মহিমা ইসলাম রিমি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এ উন্নয়নশীল দেশে বহু সমস্যাই অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করছে। তার মধ্যে বর্তমানে দেশের আলোচিত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি সমস্যা হলো বেকারত্ব। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশ হলেও এর সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্বের হারও। এর বড় কারণ, সব শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষামুখী। হন্যে হয়ে সবাই সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছেন। সরকারি চাকরি যেন ‘সোনার হরিণ’। চাকরি না পেলে পরিবারসহ তারা অথৈ জলে পড়েন। অথচ চাকরির বাজার নিতান্তই সীমিত। নিশ্চিন্ত ও সুখী জীবনযাপনের আশায় সবাই লক্ষ্য স্থির করেন চাকরি করার ও আদাজল খেয়ে লেগে পড়েন। চাকরির আসন কম থাকলেও তাই সবাই চাকরির জন্যই পড়েন বা পড়তে বাধ্য হোন।

জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় আমাদের দেশে বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থান জোগান কী কষ্টসাধ্য ব্যাপার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেখানে জ্ঞানচর্চার বদলে যেন চলে চাকরির পড়ার ধুম। জীবনের সঙ্গে শিক্ষার মিল থাকা উচিত সর্বাগ্রে। আমাদের দেশে স্কুল-কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও এর সঙ্গে চাকরির বাজারের সামঞ্জস্য নেই। ফলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে উচ্চশিক্ষাও হুমকির মুখে পড়বে।

বেকারত্ব দেশ ও জাতীয় জীবনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশর অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক এই বেকারত্ব সামাজিক জীবনেও আনছে মারাত্মক বিপর্যয়। অনেক যুবক নিজেকে সমাজ ও পরিবারের বোঝা ভেবে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে। অনেকেই বেকারত্বের ঘানি বইতে না পেরে নৈতিকতা হারিয়ে নীতিহীন হয়ে পড়ছেন।

গত ২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হলেও বেকারত্বের সংখ্যা কমছে না। অষ্টম জনবহুল এ দেশের বেকারত্ব নিরসনে মনমানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে প্রথমে। চাকরির জন্য না ছুটে উদ্যোগক্তা হওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান করতে পারলে শুধু নিজের নয়, অন্যেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া সম্ভব। দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষিত বেকারের বদলে উদ্যোগক্তা গড়ে উঠলে দেশের চেহারার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া হাতে কলমে শিক্ষা বা কর্মশিক্ষার উপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাই পারে একটা দেশের বেকারত্ব নিরসন করতে।

বেকারত্ব দূরীকরণে অন্যতম উপায় হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমানে দেশে ৬ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। এর সংখ্যা আরও বাড়াতে সরকারের জোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। চাকরি করার সনাতনী মনোভাব ত্যাগ করে শিক্ষিত যুবকদের আত্ম-উন্নয়নমূলক কর্মের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। তাছাড়াও দেশে শিল্পায়ন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কৃষির উন্নয়ন, শিল্পোন্নয়ন, শ্রম প্রগাঢ় শিল্প, অবিরাম চাষ পদ্ধতি, গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প, বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা, শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি, নারী শিক্ষার প্রসার ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে বেকারত্ব নিরসন সম্ভব।

বেকারত্ব একটা অভিশাপ। কর্মহীন জীবনের অভিশাপকে সরাতে জনগণ ও সরকারের একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে সমাজের উন্নয়নের সারথি হতে হবে এখন থেকেই। বেকারত্বের নিরাশার সেতুকে সরিয়ে নতুন ধূমকেতুর মতো স্বপ্ন দেখতে শিখতে হবে এই তরুণ প্রজন্মকেই। তবেই বেকারত্ব নিরসন হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।