মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা

ইতিবাচক উদ্যোগ

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গণপরিবহনের বড় একটি অংশই ভাঙাচোরা ও রংচটা। মেয়াদোত্তীর্ণও বটে। বিভিন্ন সময়ে তদারকি সংস্থার অভিযানে পুরোনো গাড়িগুলোকে রং লাগিয়ে চকচকে করে ফের রাস্তায় নামানো হয়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, গণপরিবহনে যুক্ত গাড়িরগুলোর জানালার কাচ ভাঙা, বসার সিটের অবস্থা ভালো নয়। অধিকন্তু যন্ত্রপাতিও যথাযথ নয়। ফলে এগুলো দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়। সংগত কারণেই এসব গাড়ি চলাচলের বিরুদ্ধে যাত্রী তো বটেমফ, পরিবহন বিশেষজ্ঞরাও অবস্থান নেন। পরিবেশের জন্য এসব গাড়ির চলাচল ক্ষতিকর। এমন অবস্থায় জানা গেল, দেশের সড়কগুলোতে চলাচল অনুপযোগী, অচল ঘোষিত বা মেয়াদ শেষ হওয়া মোটরযান বিনষ্ট করে ফেলতে একটি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়াটি মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।

স্মর্তব্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো অতি পুরোনো ও চলাচলের অনুপযোগী গাড়িগুলোকেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে আসছে। যদিও প্রতিবছর চলাচলের অনুপযোগী গাড়িগুলোর জন্য সড়কে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, এর যথাযথ পরিসংখ্যান নেই। নীতিমালা পাস হলে আনফিট বা অচল গাড়ি স্ক্র্যাপ করা যাবে। অর্থাৎ পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ আলাদা করে মোটরযানটি ধ্বংস করা যাবে। এর মাধ্যমে সড়কে দুর্ঘটনা ও যানবাহনের দূষণ কমানো সম্ভব হবে। উদ্যোগটিকে শুভই বলতে হবে।

প্রকাশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এরই মধ্যে স্ক্র্যাপযোগ্য গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে স্ক্র্যাপযোগ্য বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৩৩ হাজার ১৭৪। অথচ সর্বশেষ গত মে মাস পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত বাস রয়েছে ৫৩ হাজার ৪৮৫টি। মিনিবাস রয়েছে ২৮ হাজার ৮৮টি। বাস-মিনিবাস মিলিয়ে মোট দাঁড়াচ্ছে ৮১ হাজার ৫৭৩টি। এর বিপরীতে ৪০.৬৬ শতাংশ গাড়িই ধ্বংসযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। গণপরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের অচল গাড়িগুলোও বাধ্যতামূলক স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে আইনে। বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ট্রাকের সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৪। কাভার্ডভ্যান রয়েছে ৪৫ হাজার ১৫৯টি। মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬০৩টি পণ্যবাহী গাড়ির মধ্যে স্ক্র্যাপযোগ্য ৩০ হাজার ৬২৩টি, যা ১৫.৭৩ শতাংশ। প্রশ্ন জাগতে পারে, মোটরযানে স্ক্র্যাপ কী? বিআরটিএ আইন বলছে, মোটরযান স্ক্র্যাপ মানে মোটরযান থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ আলাদা করার পর বিনষ্ট বা ধ্বংস করা। সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে গাড়ির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআরটিএর মাধ্যমে মোটরযান স্ক্র্যাপ করার জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে, যাদের স্ক্র্যাপ ভেন্ডর বলা হবে। আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মোটরযান অকেজো ঘোষণা ও নিষ্পত্তির নীতিমালা অনুযায়ী, অকেজো ঘোষিত মোটরযান বলতে আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অকেজো যানবাহন এবং সড়কে চলাচল অযোগ্য ব্যক্তি মালিকানাধীন যে কোনো মোটরযান হতে পারে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে মোটরযান স্ক্র্যাপের সংজ্ঞা অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে।

টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা অবশ্যই যথাযথ হতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, শুধু গণ ও পণ্য পরিবহনে সীমাবদ্ধ না রেখে স্ক্র্যাপ নীতিমালার আওতায় ব্যক্তিমালিকাধীন গাড়িও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এই যুক্তি অমূলক নয়। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নিবন্ধনের সময় ধরে একটি গাড়িকে চলাচল অনুপযোগী ঘোষণা করা ঠিক হবে না। কম বছরেও গাড়িটি বেশি সময় চলতে পারে। এতে গাড়ির অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সঙ্গে মাইলেজ নির্ধারণ করা যেতে পারে। আর গাড়ির অবস্থা কেমন সেটিও বিবেচনা করা যেতে পারে। আশা করা যায়, আরও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আসবে, সেগুলো আমলে নিতে হবে।