৯৯% প্রাপ্তবয়স্ক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

অসংক্রামক রোগে সচেতনতা জরুরি

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রোগা-শোক আমাদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়, এটি নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, ভেজাল খাবার আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অসুখ-বিসুখের জন্য উপযুক্ত অবস্থা বিরাজ করছে আমাদের চারপাশ। আমরা সব সময় সংক্রমণ রোগ নিয়ে আতঙ্কে থাকি, অথচ অসংক্রামক রোগ যে জীবনকে বিপর্যস্ত করে চলছে, এ নিয়ে কমই উদ্বিগ্ন। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে সাড়ে চার কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, দেড় কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, প্রায় এক কোটি মানুষ স্থূল। এই অবস্থায় দেশের বেশির ভাগ মানুষ অসুস্থ থাকাই স্বাভাবিক। বাস্তবে তাই লক্ষ করা যাচ্ছে। সদ্য এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় ১ শতাংশের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। বলা যায়, এরা রোগমুক্ত। আর বাকি প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় দেশব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকির এ বিষয়টি জানা গেছে। রোববার এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গবেষণায় সহায়তা করেছে। জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি বিষয়কে স্বাস্থ্যঝুঁকির তালিকায় রেখেছে- উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান, পর্যাপ্ত ফল না খাওয়া এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা। কেউ একটি ঝুঁকির মধ্যে আছেন, কেউ একাধিক ঝুঁকির মধ্যে আছেন। বয়স যাঁদের বেশি, তাঁদের ঝুঁকিও বেশি।

ওই গবেষণা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, যা আমাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির দুরবস্থার বিষয়টিই তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ১৮ থেকে ৬৯ বছর বয়সি মানুষের ৯৬ শতাংশ প্রয়োজন মতো ফলমূল বা শাকসবজি খান না। একই বয়সি ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম করেন না বা তাঁরা শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় নন। এই বয়সি মানুষের ২০ শতাংশ ধূমপান করেন। ২৫ শতাংশ পান-জর্দা ব্যবহার করেন। এই বয়সি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মদ্যপান করেন। পাশাপাশি ২৪ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অন্যদিকে দেশের ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তথ্য অনুযায়ী, দিনে মোট পাঁচবার ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়া দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা দিনে শূন্য দশমিক ৪ বার এবং ১ দশমিক ৯ বার শাকসবজি খান। ৩৭ শতাংশ মানুষ খাওয়ার সময় খাবারে কাঁচা লবণ নেন এবং ১৩ শতাংশ মানুষ প্রচুর লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড খান। আমরা জানি, ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য দরকার। আর এই তথ্যটি মোটামুটি সবাই জানে, এটা আমরা দাবি করতে পারি। কিন্তু বাজারে থরে থরে সাজানো নানাপদের ফলের দেখা মিললেও বেশির ভাগ মানুষ পুষ্টির জন্য ফল খেতে পারছে না। এখানে সাধারণ মানুষে অর্থনৈতিক বিষয়টি বুঝতে হবে। বাস্তবে চাল-ডাল কেনার পর ফল কেনা অনেকের কাছে বিলাসিতাই মনে হয়। বাজারে সবজির দামও এখন নাগালের বাইরে। তারপর আছে বিশুদ্ধ খাবার পাওয়ার অনিশ্চয়তা। পরিণামে অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।

গবেষণার ফলের ভিত্তিতে বলা যায়, জনগণের বেশির ভাগই রোগাক্রান্ত। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগে মানুষ প্রতিনিয়ত ভুগছে। তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ। আর রোগমুক্তি শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে সম্ভব নয়। এটা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য তথা ক্রয়ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য সাধারণ মানুষের থাকলে রোগ অনেকটা কমে যায়। তাই এখানে অর্থনীতির বিষয়টি সামনে চলে আসে। অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল জীবনাচারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত কর্মপন্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।