ঢাকার উপকণ্ঠে মাদক কারবার

নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাদক কারবারের সঙ্গে অপরাধের একটি সংযুক্তি থাকবেই। তাই দেখা যায়, যেসব এলাকা মাদক ব্যবসার হটস্পট, সেখানে অস্থিরতা লেগেই থাকে। দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ আর অপরাধ সেখানে হাত ধরাধরি করে চলে। আমরা মাদক কারবারির অভয়ারণ্য হিসেবে কক্সবাজারকে চিহ্নিত করে থাকি, এর যৌক্তিক কারণও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের মতো শিল্পনগরীর নামও শোনা যাচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ছড়িয়ে দেয়ার ট্রানজিট পয়েন্ট (মধ্যবর্তী কেন্দ্র) হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মাদকের টাকায় গাড়ি-বাড়িও করেছেন কেউ কেউ। আর পুলিশের হিসাবেই রাজধানীর উপকণ্ঠের ছোট এ জেলায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি মাদক কারবারে যুক্ত আছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক গেছে। তা ছাড়া ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে রয়েছে নৌ যোগাযোগ। সে কারণে ভারত সীমান্তবর্তী দুই জেলা কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে দেশে যেসব মাদক ঢুকছে, সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে এ জেলাকে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবার চালানও এ জেলায় ঢুকছে।

প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ মাদকের ট্রানজিটে পরিণত হওয়া দুঃখজনক ঘটনা। কারণ এই নগরী একটি সম্ভাবনাময় শহর। দেশের অন্যতম প্রধান নৌবন্দর এখানেই রয়েছে। একসময় আদমজী জুট মিলের জন্য খ্যাত এ শহরটি এখন পোশাক লিল্পে নেতৃত্ব দেয়া একটি উৎপাদন কেন্দ্র। বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি বাজার হিসেবেও এর রয়েছে গুরুত্ব। পাটের দৈন্যদশার মধ্যে এখনও নারায়ণগঞ্জ এ শিল্পের গৌরব বহন করে চলছে। সংগত কারণেই এখানে মাদক বিস্তারের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ মাদক কারবারির যে তালিকা করেছে, এর বাইরেও অনেক মাদক কারবারি রয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট, নারায়ণগঞ্জে প্রকৃতপক্ষে কতজন মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত তার সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। আবার এ জেলায় কতজন মাদকসেবী আছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জে সাতটি মাদক নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ জন রোগী ভর্তি হন। তবে অধিকাংশ মাদকসেবী নিরাময়কেন্দ্রে আসেন না। আরও জানা যায়, এ জেলায় মাদক কেনাবেচার বড় স্পট বা স্থান রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় স্পট রূপগঞ্জের চনপাড়া। আর অপরাধের অভয়ারণ্য হিসেবে এ এলাকাটি ঘুরেফিরে পত্রিকার শিরোনাম হয়ে আসছে। আর এর নেপথ্যে যে মাদক কারবার তা বলাবাহুল্য।

আশার কথা, এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলায় অনেকগুলো মাদকের বড় চালান ধরা পড়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, এসব মাদকের চালানের কোনো কোনোটির গন্তব্য ছিল ঢাকা ও আশপাশের জেলা। এটাকে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা হিসেবে দেখতে পারি। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, পুলিশ মাদক বন্ধে আন্তরিক হলে কখনোই এটা চলতে পারে না। বলা হচ্ছে, মামলার তদন্তের দুর্বলতার কারণে মাদক কারবারের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। মূলত মাদকসহ যারা ধরা পড়েন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। মাদকের উৎস, গন্তব্য এবং নেপথ্যে কারা যুক্ত, তা বেশির ভাগ মামলার তদন্তে উঠে আসে না। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সবার আন্তরিকতায় মাদক নিয়ন্ত্রণ হবে- এটাই প্রত্যাশা।