ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শুল্ক-কর আদায়

বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে কী?

রেজাউল করিম খোকন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক
বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে কী?

আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এনবিআর, এনবিআর-বহির্ভূত কর, অন্যান্য রাজস্বসহ সব মিলিয়ে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। ঘাটতি অর্থায়নের জন্য দেশি-বিদেশি উৎস ব্যবহার করা হবে। যেমন- ব্যাংকঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আর বৈদেশিক ঋণ হিসেবে আসবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে, পুরো অর্থবছরে তা নেওয়া হলে মূল্যস্ফীতির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, টাকাগুলো উৎপাদনমুখী কাজে ব্যবহার করাই সরকারের উদ্দেশ্য। বেশি ব্যাংকঋণ মানেই বেশি টাকা ছাপানো। আর বেশি টাকা ছাপানো মানে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা। শুধু তাই নয়, এতে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। শুল্ক-কর আদায়ে মরিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একদিকে সরকারের বাড়তি ব্যয়ে অর্থ জোগান দেওয়ার চাপ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করার বাধ্যবাধকতা। সব মিলিয়ে বাজেটে করছাড়ের চেয়ে কর আদায়ের উদ্যোগই বেশি রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। এই বিশাল লক্ষ্য অর্জনে এনবিআর বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্ক-কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে করারোপ হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর কিছু ক্ষেত্রে চাপ বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বেশির ভাগ আয়কর রিটার্ন জমাকারীকে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারণ, ৪৪ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। যেমন- সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড নেওয়া, রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি দেওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়াসহ সাধারণ করদাতার নেওয়া কিছু সেবা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। আগের ৩৮টি সেবার ওপর এ বছর আরও ছয়টি সেবা যুক্ত হচ্ছে। আবার মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। জমি-ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। বহুল আলোচিত বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগের মেয়াদ বাড়েনি। কারণ, কেউ এই সুযোগ নেননি। জমি-ফ্ল্যাট কেনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নতুন আয়কর আইনে থাকছে। গাড়িওয়ালাদের জন্য আগামী বাজেট দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। কেউ যদি দ্বিতীয় গাড়ি কেনেন, তাহলে কার্বন করের মতো বাড়তি কর দিতে হবে। গাড়ির সিসিভেদে বাড়তি করের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা। গাড়ির ফিটনেস সনদ নেওয়ার সময় এই কর দিতে হয়। বতর্মানে তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে করের ওপর সারচার্জ দিতে হয়। এই সম্পদের সীমা বাড়িয়ে চার কোটি টাকা করা হয়েছে। আকাশ, স্থল ও জলপথে ভ্রমণ কর ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করের ১ হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে প্রবাসী শ্রমিকদের খরচ বাড়বে।

আইএমএফের শর্ত পূরণে এনবিআরকে আগামী অর্থবছরে বাড়তি ৪৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। ফলে আগামী বাজেটে এনবিআর বিভিন্ন খাতে উৎসে কর বসিয়ে কর আদায়ে বেশি মনোযোগী। গত এক দশকে রাজস্ব খাতে বড় কাঠামোগত সংস্কার হয়নি। করের আওতা খুব একটা বাড়েনি। কর ফাঁকিবাজদের ধরার জোরালো উদ্যোগ নেই। করদাতার ফাইল প্রস্তুত করা, জমা দেওয়ায় সহযোগিতা করার জন্য বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কলকারখানা স্থাপনের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের অসুবিধা বাড়বে। করছাড় কমানোর উদ্যোগ নিতে বলেছে আইএমএফ। ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে বেশির ভাগ করছাড় সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া আর কোনো করছাড়ে মেয়াদ বাড়াতে চায় না এনবিআর। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে স্বাভাবিক প্রবণতার অতিরিক্ত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ আদায় করতে হবে। এনবিআর হিসাব করে দেখেছে, আগামী অর্থবছরের অতিরিক্ত ৪৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। করছাড়ও কমিয়ে আনতে হবে। আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতে কর বসিয়ে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা থাকবে। আবার কিছু প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। যেমন ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর বাড়াতে একটি বিশেষ ডিজিটাল ডাইরেক্ট ট্যাক্স ইউনিট গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক কর ইউনিট ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের জন্য আলাদা ইউনিট গঠন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এনবিআর মনে করছে, আয়কর খাতে এসব সংস্কারের ফলে আগামী তিন বছরে আয়কর আদায়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। এই সময়ে লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। মূলত ডলার সংকটের কারণে বিলাসপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানির রাশ টেনে ধরে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। বাড়তি করের লক্ষ্য থাকলে এনবিআর কর্মকর্তারা সহজ পথটি বেছে নেন। যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপরেই বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দেন। উৎসে কর বসিয়ে দেন। গত এক দশকে রাজস্ব খাতে বড় কাঠামোগত সংস্কার হয়নি। করের আওতা খুব একটা বাড়েনি। কর ফাঁকিবাজদের ধরার জোরালো উদ্যোগ নেই। কর আদায়ের বাড়তি চাপ থাকলে করদাতাদের ওপর হয়রানি বাড়ে। ধনী-গরিব নির্বিশেষ পরোক্ষ করের বোঝা সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যমান রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে এত বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরের পিছিয়ে পড়ার কারণটাও সবার জানা।

রাজস্ব আহরণে এমনিতেই অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ করে ধনাঢ্য শ্রেণির মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। সবাই যদি ঠিকঠাক মতো বিভিন্ন কর পরিশোধ করে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। রাজস্ব আয় কমে আসায় এখন শঙ্কা জাগছে সরকারের ব্যয় নিয়ে। উন্নয়ন ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণও বেড়ে যাবে। রাজস্ব বাজেটে আগামী অর্থবছরে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, দেশের তৃণমূল এলাকায় রাজস্ব দপ্তর স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে আয়কর মেলার আয়োজন করতে হবে। শহরের সম্পদশালী করদাতাদের পাশাপাশি উপজেলা গ্রামের ধনীদের প্রতিও নজরদারি বাড়ানোর কৌশল থাকতে হবে। তবে এনবিআরের সাধারণ জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা না চাপানোর চেষ্টা থাকতে হবে। একথা সবাইকে অবলীলায় মানতে হবে যে, রাজস্ব আদায়ে আয়কর খাতই হলো সবচেয়ে বড় খাত। আয়করের আওতা বাড়ানোর নানা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে গ্রামীন অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এখন সময় এসেছে শহরের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির। বর্তমানে এদেশের বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থায়নের হিসাব ধরা হয় এনবিআর থেকে। রাজস্ব জালের বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে পুরো বাজেটের অর্থায়ন সম্ভব। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে রাজস্ব আদায়ের পরিমান বাড়াতে আয়কর আদায়ের ব্যাপারে অবশ্যই জোর দেওয়া দরকার। এনবিআর যদি একটু কৌশলী হয় তাহলে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো অসম্ভব কিছু নয়। এনবিআর থেকে নতুন করদাতা সৃষ্টিতে আয়কর মেলা আয়োজনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। ভ্যাট অর্থাৎ মূল্য সংযোজন কর আদায় নিয়েও রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। জটিলতার কারণে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। ভ্যাট আইন-২০১২ প্রনয়নের সময় থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে ব্যবসায়ীরা। ভ্যাট আইনের ইতিবাচক দিকগুলো ব্যবসায়ীদের জানাতে এখন অনেক বেশি সচেষ্ট এনবিআর। এ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের মতামত, বক্তব্য গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ভ্যাট আইনের যে সব ধারায় আপত্তি আছে তা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করদাতাদের হয়রানি না করে ঠিকভাবে বুঝিয়ে ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। তাহলে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবেনা। ঘরে বসেই অনলাইনে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলে করদাতারা হয়রানি ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন। ভ্যাট অফিসে দৌড়াদৌড়ি না করে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরো সক্রিয় এবং আধুনিক করে তোলার বিকল্প নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর অঞ্চলগুলোকে বিশদ কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। এগুলোর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও রাজস্ব আহরণের দিক থেকে সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করাটাও জরুরি। পাশাপাশি বকেয়া ও ঝুলে থাকা রাজস্ব আদায় জোরদার, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানো, আমদানি তথ্যসংগ্রহ ও যাচাই এবং রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করা জরুরি। এছাড়া বাজেটে ঘোষিত নতুন খাতগুলোর ওপরও নজরদারি বাড়াতে হবে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে রাজস্বের একটি বিরাট অংশ আহরণ করা হয়। প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা আয়কর রিটার্ণ দাখিলের মৌসুমে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের কাছ থেকে রিটার্ণ দাখিলের বিপরীতে সরকারি কোষাগারে একটি বড় অংকের রাজস্ব জমা হয়। সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরের পরে আরো কয়েক মাস পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলে না। এভাবে চলতে থাকলে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আগামীতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠতে পারে। জিডিপির তুলনায় আমাদের রাজস্ব আহরণের পরিমানও সন্তোষজনক নয়। অথচ উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি ব্যয় হ্রাসের সুযোগ কম। তার সঙ্গে অর্থের অপচয় রোধে ব্যবস্থা গ্রহণও একান্ত প্রয়োজন। লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব আহরণে গতি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে আয়কর আহরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সুফল বয়ে আনছে। এসবের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটেছে বটে, তবে এক্ষেত্রে আরো উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। সেদিক থেকে রাজস্ব মামলা সচলকরণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এনবিআরে দক্ষতার অভাব এবং জনবলের স্বল্পতা নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে দৃষ্টি দিতে হবে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে। রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনা যেন সাধারণ মানুষ করদাতাদের জন্য হয়রানিমূলক ঝামেলাপূর্ণ না হয়ে করদাতাদের জন্য সহজ সাবলীল হয়ে ওঠে, করদাতারা যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর প্রদানে উৎসাহী হন তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে শুল্ক, মূসক ও আয়কর বিভাগকে। শক্তিশালী করতে হবে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাকে। আমরা চাই দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গতিশীল থাকুক। আর সেজন্য প্রয়োজন রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে সমস্যা রয়েছে তা স্থায়ী থাকবেনা যদি তা দূরীকরণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। রাজস্ব আদায়ে চলমান সংকট সৃষ্টি হয়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতার জন্য। আশা করা যায়, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো জোরালো হবে আগামী দিনগুলোতে। এক বছরের ব্যবসা বাণিজ্য থেকে পরের বছরে রাজস্ব আদায় হয়। চলতি বছর রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি আদায় করা এনবিআরের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতি দীর্ঘ মন্দা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে রাজস্ব আহরণে নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করা যাবে না। এনবিআরকে পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করতে হবে। রাজস্ব আদায়ের মূল জায়গা হলো আমদানি-রপ্তানি। সেখানে কোনো জটিলতা ছিল না, এখনও নেই। বরং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে আয়কর খাতকে গুরুত্ব দিয়ে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে রাজস্ব আহরণে দারুণ গতির সঞ্চার হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত