ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

বন্যার আগাম প্রস্তুতি দরকার
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

দেশের কিছু অঞ্চলে বন্যার আলামত লক্ষ করা যাচ্ছে। মূলত এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে নদীভাঙনও বেড়েছে। এতে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অনেকে গৃহত্যাগের আতঙ্কে রয়েছে। প্রকাশ, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদ-নদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার আমন বীজতলা, পাট, পটোল, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি খেত তলিয়ে গেছে। কাঁচা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ও সড়কে পানি ওঠায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণে চরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। পশুখাদের সংকটও দেখা দিয়েছে। এদিকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তে বগুড়ার সারিয়াকান্দির বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাগুয়া নৌঘাট সংলগ্ন এলাকার ২৩টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ভেঙে গেছে। অন্যদিকে যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ২০টি বাড়িঘর ও অর্ধশত গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অসহায় মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পুরো এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অতিবর্ষণের পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলেও প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা। ভারতের মেঘালয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বেড়ে ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডুবে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজারের খাসিয়ামারা নদীর হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এই উপজেলার সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারা ও ধুমখালীসহ নদী-নালার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের কাছাকাছি ঢলের পানি ঢুকতে দেখা গেছে। লোকালয়ের কাছাকাছি হাওর ও নদীর পানি ঢুকছে তাহিরপুর উপজেলায়। নিম্নাঞ্চল ও হাওরপাড়ের লোকজন বন্যার পদধ্বনিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। পাশাপাশি কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তা ও মাঠঘাট তলিয়ে গেছে বিশ্বনাথে। বিশ্বনাথ পৌরসভা কার্যালয়, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও জনস্বাস্থ্য কার্যালয়সহ তিনটি দপ্তর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে সেবা গ্রহীতারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অধিকন্তু বাসিয়া নদীর সংযোগ সড়ক ও জনপদের বিশাল খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। স্মর্তব্য, এখনও পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ না করলেও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

বন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এটা থামানো মানুষের পক্ষে অসম্ভব। তবে বন্যায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এই লক্ষে এখনই যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া দরকার। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকার অনেক মানুষ নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছে, তাদের ভরসা দিতে হবে। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বসবাসের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের দেখভালের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আক্রান্ত মানুষ যাতে অনায়াসে ত্রাণসামগ্রী পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বন্যাত্তোর পুনর্বাসনের কথাও ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত