ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

মহিমা ইসলাম রিমি
বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে; কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়।’- কবি ও দার্শনিক ওমর খৈয়াম মানবজীবনে বইয়ের স্থানকে এভাবেই নির্ধারণ করেছেন। জীবনের সব বস্তুগত উপকরণ হারিয়ে গেলেও, সময়ের কালে ধুলোয় মলিন হলেও বই থাকে চির যৌবনে আসিন। সেজন্যই বই আমাদের দেয় আনন্দের আধার, অমৃতের সুধাভান্ডার। নিষ্কলুষ ও নির্মল আনন্দের জন্য মানুষের জন্য নীরব হৃদয় মেলে ধরে আছে অগণিত বই। জীবনের রূঢ় বাস্তবতা ও জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে বইয়ের মাঝে ডুবে থাকতে পরামর্শ দেন দার্শনিক ও নাট্যকার বার্ট্রান্ড রাসেল। রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করে বলেন, ‘মানুষ বই দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে।’

বর্তমানে স্মার্ট প্রযুক্তির যুগে তরুণ প্রজন্ম বই পড়া থেকে বিমুখ। স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব, ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত হতে দেখা যায় তাদের। প্রযুক্তির ব্যবহার খারাপ না, বরং এর অতিব্যবহার ও অপব্যবহার তাদের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এর সমাধান হতে পারে তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে। প্রযুক্তির অতি ব্যবহার যেমন মানসিক অবসাদের সৃষ্টি করে, বই পড়লে তেমনি মানসিক অবসাদ দূর হয় এবং মন প্রফুল্ল থাকে।

বই পড়লে একাগ্রতা বাড়ে, জ্ঞান ও কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায়, ভালো ঘুম হয়, একাকিত্ব দূর হয়, মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে, লক্ষ্য পূরণে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, শব্দ ভান্ডার বাড়াতেও সাহায্য করে। বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়। জনাথন সুইফট বলেন, ‘বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান’। অর্থাৎ, বই পড়লে মস্তিষ্কের কোষগুলো উদ্দীপিত হয় ও স্নায়ুগুলো উজ্জীবিত হতে থাকায় বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাশক্তি জাগ্রত হয়। ফলে লিখন ও পাঠন দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।

‘শর্ট অ্যান্ড লং টার্ম এফেক্টস অব অ্যা নভেল অন কানেক্টিভিটি ইন দ্য ব্রেইন’- নামক একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমআরআই পরীক্ষা করে দেখেছেন, কীভাবে উপন্যাস পড়ার সময় মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ২০০৯ সালে আমেরিকায় এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা স্ট্রেস লেভেলের ওপর ইয়োগা ও বই পরিমাপ করেন। তারা দেখতে পান, আধা ঘণ্টা বই পড়া, ইয়োগার মতোই আমাদের ব্লাড প্রেশার, উচ্চ হৃদস্পন্দন ও মানসিক অশান্তি কমায়।

২০১৯ সালে ‘সেনগেজ’ দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ৬৯ শতাংশ নিয়োগকর্তা তাদেরই হায়ার করতে চায়, যারা খুব ভালো যোগাযোগ দক্ষতা রাখে এবং যাদের শব্দ ভান্ডার খুব গভীর। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, নতুন শব্দের জ্ঞান বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল বই পড়া ও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। সবচেয়ে ভালো অভ্যাসগুলোর মধ্যে এটি একটি। যত বই পড়া যায়, ততই জ্ঞান বৃদ্ধি হয় এবং ব্যক্তির মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। বই পড়া সময় নষ্ট তো নয়ই, বরং সময়কে উপলব্ধি করবার এক আশ্চর্য হাতিয়ার।

বই পড়ার জন্য থাকতে হবে সদিচ্ছা। বইয়ের সাথে টাকার সম্পর্ক যুক্ত করতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেন, ‘বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয় না।’ নীরব ভাষায় বই আমাদের জীবনকে যে সুন্দরের গান শোনায়। আর তাতেই প্রমাণিত হয়, বই আমাদের একান্ত বন্ধু ও নিঃস্বার্থ সুহৃদ। কাজেই আমাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এখন থেকেই।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত