আমাদের চামড়া শিল্প বিকাশে কোরবানির ঈদ বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। কারণ এই ঈদকে ঘিরে সংগৃহীত হয় বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া। আসন্ন ঈদুল আজহায় কমবেশি সোয়া কোটি পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হবে- এমন হিসাব দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। আর বিপুলসংখ্যক এই চামড়ার মধ্যে একটি অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের শঙ্কায় ভুগছেন ট্যানারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। চামড়া পাচার হতে পারে- এমন ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত পথে ১২টি এবং রাজধানীসহ ঢাকার আশপাশ এলাকায় সাতটি। সম্প্রতি এ তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। বিষয়টি সরকারের তরফে গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, চামড়া পাচার রোধে এবং চামড়া যেন সীমান্ত অভিমুখে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকে করবে। চামড়ার বাজার ঘিরে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। আশা করা যায়, এর ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো চামড়া পাচারের যে আশঙ্কা করছে, তা প্রশমিত হবে। তবে এই নিয়ে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে।
উল্লেখ্য, সারা বছরের পশুর চামড়ার মোট সংগ্রহের ৫০ শতাংশ আসে কোরবানি থেকে। বিটিএর হিসাবে আসন্ন কোরবানিতে কমপক্ষে ১ কোটি ২৫ লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ হবে। এর মধ্যে আছে প্রায় এক কোটি গরু ও মহিষ এবং ২৫ লাখ ছাগল ও ভেড়া। এই চামড়ার বাজার ঘিরে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা টার্নওভার হবে। অবশ্য এ জন্য এখন থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর তৎপরতা জরুরি। সূত্রমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা কোরবানির চামড়া পাচারের ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত রুটের তালিকার মধ্যে রয়েছে- বেনাপোল, সাতক্ষীরা, কলারোয়া, জীবননগর, মেহেরপুর, দর্শনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, জাফলং, তামাবিল, করিমগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সীমান্তপথ। ট্যানারি মালিকদের দেওয়া তথ্যমতে- যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাটকলঘাট, কালীগঞ্জ, নড়াইল ও রাজারহাট এলাকার কোরবানির চামড়া সাধারণত পাচার হয় বেনাপোল, কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে। এ ছাড়া ঝিনাইদহ, মাগুড়া, শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের চামড়া পাচার হয়ে থাকে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্ত পথ দিয়ে পাচার হয় নাটোর হাটের চামড়া। সূত্র আরও জানায়- চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, আল্লাহ দরগা, দৌলতপুর ও আলমডাঙ্গার চামড়া পাচারের রুট হচ্ছে মেহেরপুর ও দর্শনা সীমান্ত পয়েন্ট। এছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের কোরবানির চামড়া পাচারের জন্য জাফলং, তামাবিল ও করিমগঞ্জ সীমান্ত পথকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আর দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশ এলাকা বিপুলসংখ্যক পশু জবাই হয় কোরবানিতে। ঢাকার চামড়া পাচার করতে সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে সেগুলো নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে তারা সাতটি রুট ব্যবহার করে।
পশু পাচারের রুটগুলো বিটিএ চিহ্নিত করেছে। এই নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আরও তথ্য থাকা আবশ্যক। আশা করা যায়, তারা পাচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তাহলে ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের দুশ্চিন্তা দূর হবে। দেশের চামড়াশিল্প উন্নতি করবে।