ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

শেকড়ে ফেরার প্রস্তুতি

জুনায়েদ মাসুদ, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, [email protected]
শেকড়ে ফেরার প্রস্তুতি

জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন সময়গুলো আরো আনন্দময় হয়ে উঠে, যখন আপন পরিবারের সঙ্গে তা ভাগ করে নেয়া যায়। ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দকে আরো স্মৃতিময় করতে নিজ শেকড়, মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, নিজ জন্মস্থান ছেড়ে শহরে যন্ত্রের মতো খেটে খাওয়া মানুষগুলো আবার স্বপ্ন নিয়ে ফিরে যায় তাদের আপন শেকড়ে।

আগামী ২৯ জুন রোজ বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহা উদযাপন হতে যাচ্ছে। তাই, রাজধানী ঢাকায় এবারের ঈদকে ঘিরে স্বপ্ন টানে ঢাকায় মানুষের প্রস্তুতির কমতি নেই। সবাই ব্যস্ত ঈদের কেনাকাটায়। শেষ করে বাড়ির পথে পারি দিতে হবে। কারণ, ঈদ মানেই পরিবারের প্রত্যাশা। ঈদকে ঘিরে পরিবারের থাকে অনেক চাওয়া পাওয়া। মায়ের জন্য শাড়িটা, বাবার জন্য পাঞ্জাবিটা, ভাইবোনের জন্য, স্ত্রী-ছেলেমেয়ের নতুন জামাটা আর তাদের নানান আবদার পূরণ করতে তাকে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। একটু বাড়তি পরিশ্রম করে, নিজে না খেয়ে টাকা জমিয়ে রাখে পরিবারের আবদার মেটাতে।

বছরের এই দুই ঈদে যেনো বাড়িতে না গেলেই নয়। সারা বছরের কর্মব্যস্ততা মাড়িয়ে একটু সুখ আর আনন্দ উপভোগ করতে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে হয়। এটাই যেনো মনের খোরাক।

তাইতো, এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানী ছাড়বেন প্রায় ১ কোটি মানুষ। দেশের অন্যান্য বিভাগ থেকে কর্মজীবী এবং শিক্ষার্থী মিলিয়ে আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নিজের বাড়িতে যাবেন। এবারের ঈদে সব মিলিয়ে প্রায় ছয় কোটি মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি যাবেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৪ জুন, বুধবার থেকে ২৪ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ২৪ জুন ঢাকা থেকে ট্রেনে ঈদ যাত্রা শুরু হলেও যাত্রী চলাচলের মূল চাপ আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে।

হিসাব অনুযায়ী, বাসে ৪০ লাখ, লঞ্চে ৩০ লাখ, ট্রেনে ১০ লাখ, ভাড়া করা ও নিজস্ব মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়িতে ৩০ লাখ এবং বিমানে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। আর ঈদের আগের দিন বা ঈদের দিন ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন ছোট যান, পিকআপ ও ট্রাকে করেও মানুষ ঘরে ফিরবেন।

ঈদুল আজহা মানে গরুর মাংসের বিভিন্ন রেসিপি আর আইটেম। কিন্তু সেই সব অভিজাত খাবার গরিবের ভাতে মেলে কই? তাই, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও নিজেদের বাড়িতে ফিরবে না কিছু দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, যারা সারাবছর কোনোরকমে দুবেলা আধপেটা খেয়ে ঈদুল আজহার জন্য উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করে একটু গরুর গোশত খাওয়ার জন্য। এটা তাদের জন্য অনেক বড় তৃপ্তি আর আশার।

দেখা যায়, তাদের অনেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে কোরবানির গোশত সংগ্রহ করে। এগুলো অনেকে নিজের পরিবারের জন্য নিয়ে যায়, আবার অনেকে বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য চাহিদাগুলো পূরণ করে।

নাড়ির টান থাকলেও এই মানুষগুলো বাড়ি ফিরতে পারে না। ফিরেই বা কি করবে? প্রতিবেশীর ঘরে থেকে গরুর গোশতের গন্ধ যখন তার বাড়িতে আসবে। অসহায় ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে সে কি করেই বা থাকবে। কোরবানির ঈদে কতশত গরু কোরবানি হলেও এক টুকরো গোশত ঘরে পৌঁছায় না, এমনও মানুষ এ দেশে বাস করে।

সর্বশেষ, স্বপ্ন টানে যে মানুষগুলো দূর পথে আপন ছেড়ে পারি জমিয়েছে, তাদের জন্য শুভকামনা ও ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ আর উল্লাসে ঈদুল আজহা কাটুক এই আমাদের প্রত্যাশা। ঈদের এই আনন্দ শুধু নিজেদের মধ্যেই নয়, তা সর্বত্র ছড়িয়ে যাক। গরুর গোশত পৌঁছে যাক সবার মুখে। সবাই ঈদুল আজহার তৃপ্তি অনুভব করুক। এই ঈদ যেনো হয় আমাদের সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত