ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদযাত্রায় ভোগান্তি নয়

গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথ বাস্তবায়িত হোক
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি নয়

নৌসড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল ছেড়ে যায়। অন্যদিকে যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, এবারের ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ সারা দেশে যাতায়াত করবেন। আরেকটি সংবাদ হলো, বৃহত্তর বরিশালমুখী যাত্রীসংখ্যা কমলেও ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এবার ঈদে গন্তব্যে যাবেন নৌপথে। এর মধ্যে ৩ লাখ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর হয়ে এবং বাকি ২৭ লাখ যাবেন সদরঘাটসহ ঢাকার বিভিন্ন নৌপথ হয়ে। সড়ক ও নৌপথে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঘরমুখী যাত্রা নিরাপদে সম্পন্ন করা নিঃসন্দেহে জটিল কাজ। অবশ্য কর্তৃপক্ষ ঈদযাত্রা সুগম করতে প্রতিবছরই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিরাপদ ঈদযাত্রায় বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মøান হয় উৎসবের আমেজ। ওয়াকেবহাল মহল বলছে, সড়ক ও নৌপথে সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ার উদাহরণ বেশি। রেলপথে সবচেয়ে বেশি ত্রুটি হলো টিকিট ছাড়া চলাচল ও ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ ঠেকাতে না পারার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দিতে না পারা।

উল্লেখ্য, আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ করতে এরই মধ্যে ১৪টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। রেলপথ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বেশকিছু পরিকল্পনা। নৌ, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও নানা প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে। প্রতি বছরই এমন উদ্যোগ এবং নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তবে এসব উদ্যোগের পরও দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রার নজির একেবারেই কম। এদিকে এসব সিদ্ধান্ত শতভাগ কার্যকর করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে যাত্রী অধিকার আদায়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। সবার অভিমত, ঈদে ঘরমুখো মানুষের পথের দুর্ভোগের বড় কারণ সমন্বয়হীনতার পাশাপাশি অন্তত তিন দিন আগে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া। তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে গা-ছাড়া ভাব দেখা দেয়। দুর্ভোগ ও অনিয়মের প্রতিকার না পেয়ে অনেকের ভোগান্তি মাথায় নিয়ে নিজের মতো করে বাড়ি ফেরা ছাড়া উপায় থাকে না। সেইসঙ্গে দেশের গণপরিবহন বাড়ানোর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বাড়ি ফেরার ঝক্কি থেকেই যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি ঈদ উপলক্ষ্যে বাস সার্ভিস চালু করলেও সেবার মান ভালো না হওয়ায় সেখানে যাত্রী হয় না। অনেকেই জানেন না, বিআরটিসি বাস কোথা থেকে ছাড়ে। তেমনি আসা-যাওয়ায় বাসের বাড়তি ভাড়া, লক্কড়-ঝক্কড় আনফিট যানবাহন চলাচল, চালকদের লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সিটি সার্ভিসগুলো আন্তঃজেলায় চলাচল, দাঁড়িয়ে ও ছাদে যাত্রী পরিবহন, পণ্যবাহী বাহনে যাত্রী নেয়ার অভ্যাস একেবারেই বদলায়নি। যথাসময়ে সব সড়ক মেরামত না হওয়ায় বড় সমস্যাও রয়েছে। ঈদের আগের তিন দিনসহ ঈদের দিন ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধের নির্দেশনা মানার প্রবণতাও কম। যানবাহন সংকট তো আছেই। আবার দুর্ঘটনার পর দ্রুত সড়ক থেকে গাড়ি সরানো ও রেকারের ব্যবস্থা থাকা, পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারির সিদ্ধান্তও পুরোপুরি কার্যকর হয় না। এগুলো অনভিপ্রেত।

বাস্তবতা যে, বিরাজমান পরিস্থিতিতে একেবারে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ঈদযাত্রা কঠিন বিষয়। কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে হবে না। এজন্য সড়ক ও নৌপথে অবশ্যই শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। অন্ততঃপক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, সেগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বহাল রাখতে হবে। আর ঈদের ফিরতিযাত্রায়ও সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত