ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিশুদের ডিভাইস আসক্তি

সচেতন হওয়ার এখনই সময়
শিশুদের ডিভাইস আসক্তি

আজকাল চলার পথে চশমা পরা শিশুদের চোখে পড়ে। সংখ্যাটি নেহাত কম নয়। কেন এমন হচ্ছে? অনেকে এটাকে জন্মগত বলে এড়িয়ে যান। আসলে চোখের রোগের দরুন চশমা পরতে হচ্ছে। মূলত ভয়ানক পর্যায়ে শিশুদের ডিভাইস আসক্তিতে বাড়ছে চোখের শিশু রোগী। এখন শিশুদের খেলার প্রধান মাধ্যম হয়ে পড়েছে মোবাইল এবং মোবাইল-ট্যাবের গেম। বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে ডিজিটাল গেমে শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয়ে কোনো ক্লান্তি নেই। অভিভাবকদের চাপে কিংবা চোখ রাঙানিতে শুধু গেমস থেকে মুখ তুলতে বাধ্য হয় তারা। এতে তাদের মেজাজ হয়ে পড়ছে খিটখিটে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ছে মানসিক দূরত্ব। অথচ ডাক্তাররা বলছেন, শিশুর হাতে কোনোভাবেই ফোন নেওয়া যায় না। মোবাইল ফোন বেশি দেখা যাবে না। অথচ অভিভাবকরা কখনও বিমূঢ় হয়ে, কখনোবা বাধ্য হয়ে মোবাইল তুলে দেন। কেননা, স্কুলগুলোও একটি করে গ্রুপ তৈরি করেছে হোয়াটঅ্যাপস নম্বরে, সেখানে শিক্ষকরা বিভিন্ন পড়ালেখা বিষয় জানিয়ে দেন। পরীক্ষার রুটিন জানিয়ে দেন- এ ধরনের বিভিন্ন মোবাইলভিত্তিক লেখাপড়ার কারণে ফোনটা একেবারে বাদ দেয়া যায় না। স্মর্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, দেশের ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি প্রায় ৬০ লাখ শিশু-কিশোর ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্তির কারণে নানা জটিলতায় ভুগছে। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যায় ভুগছে তারা। এই অবস্থায় সমস্যাটি শুধু পারিবারিক নয়, জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে বলা যায়।

মূলত পর্যাপ্ত খোলা জায়গা না থাকা এবং খেলার মাঠ না থাকার কারণে ডিভাইস আসক্তি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ পরিবারে এখন শিশুদের খেলনার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে মোবাইল ফোন, সেটা অবুঝ শিশুদের জন্য খেলনা মোবাইল আর বুঝমান শিশুদের জন্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। বিটিআরসির ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার বড় একটা অংশই যুক্ত থাকে নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে। বলাবাহুল্য, এই সংখ্যাটি এখন অনেক বেশি। রাস্তায় এই বয়সি প্রায় সব ছেলেমেয়ের হাতেই এখন মোবাইল ফোন দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটানা কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তাকিয়ে থাকাটা বড়-ছোট সবার চোখের জন্যই ক্ষতিকর। ছোটদের বেলায় সেটা আরও বেশি বিপজ্জনক। অভিভাবকদের অনেকে ভাবেন, শিশুদের চোখের সমস্যা বোধহয় কম হয়। এই ধারণা থেকে তারা ওদের চোখ পরীক্ষাও করান না। এসব শিশুর জন্য তখন সমস্যাটা আরও প্রকট হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, চোখের জ্বালাপোড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ পিটপিট করা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এসব অভিযোগই বেশি শিশুদের। আর এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শিশুদের চোখের মাইনাস পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। যাকে বলে মায়োপিয়া। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা কাছের জিনিস ভালো দেখলেও দূরের জিনিস দেখতে পায় না। এ সমস্যা বাড়লে দূরের বস্তু আর দেখবেই না।

বাস্তবতা যে, বর্তমানে ডিভাইস থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। তবে তা যেন আসক্তিতে পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে পারিবারিক পর্যায়ে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। শিশুদের স্বাভাবিক বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় অবশ্যই খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্কুলে সুপরিসর খেলার জায়গা থাকতে হবে। এই নিয়ে সরকারের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। আগামীর সুনাগরিক গড়ে তুলতে ডিভাইস আসক্তি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত