ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বজ্রপাত রোধের প্রকল্প

টেকসই ব্যবস্থাপনার কথা ভাবতে হবে
বজ্রপাত রোধের প্রকল্প

বজ্রপাত ক্রমেই ভয়াবহ দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সারা দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। অন্তত গত ১০ বছরে বজ্রপাতে এ মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমানুপাতিক হারে বাড়ছে। ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সরকার। এর পর এ দুর্যোগ ঠেকাতে তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি মন্ত্রণালয়। নেওয়া হয় একের পর এক প্রকল্প। কিছুদিন পর সেই প্রকল্প ব্যর্থ হলে ফের নেওয়া হয় নতুন প্রকল্প।

এভাবে প্রকল্প নেওয়া আর ব্যর্থতার মধ্যে কিছু মানুষের আর্থিক ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও লক্ষ্য আকাশকুসমই থেকে যাচ্ছে। এদিকে নিত্যনতুন প্রকল্পের ভিড়ে গচ্চা যাচ্ছে শত শত কোটি টাকা। যেমন বজ্রপাত ঠেকাতে ২০১৭ সালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে তালগাছ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বজ্রপাত ঠেকাতে তালগাছই ভরসা’ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয় তালগাছ লাগানোর বৃহৎ প্রকল্প। সরকারের তরফ থেকে সারা দেশে কোটি তালের চারা রোপণের পরিকল্পনা জানানো হয়। ৩৫ লাখ তালের আঁটি ও ১০ লাখ তালগাছ রোপণের সেই পরিকল্পনায় কিছু অংশ বাস্তবায়নের পর কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, তালগাছের মাধ্যমে বজ্রপাত ঠেকানো যাবে না। তবে ততদিনে গচ্চা গেছে শত কোটি টাকা। এ প্রকল্পের অধীনে কিছু এলাকায় স্বল্পসংখ্যক তালগাছ লাগানো হলেও সেই চারার চিহ্নমাত্র নেই। আর আঁটি থেকে চারা জন্মানো তো দূরের কথা, আঁটিরও হদিস নেই।

বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ তত্ত্বের পর ক্রমান্বয়ে বজ্রপাত ঠেকাতে নেওয়া হয় আরও নানা উদ্যোগ এবং প্রকল্প। প্রতিবছর ঝড়বৃষ্টির সময়ে কর্তৃপক্ষের নতুন প্রকল্প নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়। এর পর আবার থমকে যায় অনেক উদ্যোগ। এমনই আরেকটি ব্যর্থ উদ্যোগ লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো। বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানতে ২০১৭ সালে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ উদ্যোগ নেয়। ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আট স্থানে বসানো হয় সেই যন্ত্র। তবে সেই প্রকল্পও সাফল্যের মুখ দেখেনি। এই প্রকল্প ব্যর্থতার পর গত বছর বজ্রপাত ঠেকাতে নেওয়া হয় আরেকটি নতুন প্রকল্প। এবার বলা হয়, মানুষ ও প্রাণী রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) আওতায় ১৫টি জেলায় লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর কথা বলা হয়। এ লক্ষ্যে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মসূচির আওতায় ১৩৫ উপজেলায় মোট ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দণ্ড ও বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। পরে দেখা যায়, এসব জায়গায় আসলে যন্ত্র বসেনি। এত প্রকল্পের ভিড়ে সম্প্রতি বজ্রপাত ঠেকাতে আরও একটি উদ্যোগ নেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সহযোগিতায় বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে ‘হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার অ্যাসেসমেন্ট’ নামে একটি প্রযুক্তি চালু করে। এর মাধ্যমে ৫৪ ঘণ্টা আগেই বজ্রপাত সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়ার কথা। অতীতে অভিজ্ঞতা থেকে এই প্রকল্প কতটুকু ফলদায়ক হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

প্রশ্ন হলো বজ্র নিরোধে ধারাবাহিক প্রকল্পগুলো কেন ব্যর্থ হলো? এত অর্থই বা কেন গচ্চা দিতে হলো? এই নিয়ে সুচারু পর্যালোচনা দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চতর গবেষণা এবং দেশের বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি শুধু বড় প্রকল্পের দিকে না ঝুঁকে সচেতনতা বৃদ্ধির দিকেও নজর বাড়াতে হবে। অভিযোগ, প্রকল্প নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যারা কাজ করেন, বা যাদের উচ্চতর গবেষণা আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সম্ভাব্যতাও যাচাই করে করা হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের গাফিলতি কাম্য নয়। স্বচ্ছতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত