ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পবিত্র ঈদুল আজহা

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার দিন
পবিত্র ঈদুল আজহা

বছর ঘুরে ফের এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পরম আনন্দের একটি দিন। সারা বিশ্বের মুসলমান ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভে গৃহপালিত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইবরাহিমকে (আ.) আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করতে নির্দেশ দান করেন। এ ঘটনার পর থেকে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। স্মর্তব্য, বিগত কয়েকটি বছর করোনা সংক্রমণের ভীতির মধ্যে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে। এবার সেই ভীতি নেই। তবে মানুষ নানাভাবে সমস্যায় রয়েছে। এবার কোরবানির ঈদ এমন এক সময় এলো, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সবকিছুরই ছায়া পড়েছে এবারের সাধারণ মানুষের ঈদ আনন্দে। তারপরও যথাযথভাবে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি সর্বত্র। ঈদের আনন্দ মানুষকে নতুনভাবে করবে উজ্জীবিত। ঈদকে উপলক্ষ করে আলোকিত বাংলাদেশের শুভকাক্সক্ষী, পাঠক, গ্রাহক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের জানাই ঈদ মোবারক।

কোরবানির অর্থ হলো ত্যাগ বা উৎসর্গ। সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মধ্যে এর গোশত বিতরণ করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের দায়িত্ব। পরিতাপের বিষয়, এদেশের অনেকের কাছে ধর্মের মতো আধ্যাত্মিক একটি বিষয়ও পরিণত হয়েছে লোক দেখানো আচারে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহতায়ালা প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। প্রত্যেক মুসলমানকে তার আদেশ পালন করতে হবে অন্তরের তাগিদে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, সমাজ তথা মানুষের ভেতরের পশুশক্তিকে দমনই হচ্ছে কোরবানির মূল কথা। ঈমানদার মুসলমানরা তাই করেন। তাই পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা, বন্ধুত্ব, মমতা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে ঈদুল আজহার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চেতনার ছোঁয়া দিয়ে এই ঈদে মানবিকতা জাগ্রত হয়ে উঠুক। মনে রাখতে হবে, ঈদ শুধু নিছক আনন্দ আর ফুর্তির নাম নয়; এ থেকে জীবনের জন্য শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে সুখ, সৌহার্দ্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসা এই পবিত্র উৎসবে ধনী-দরিদ্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব মুসলমান মিলেমিশে ঈদের আনন্দ সমভাগ করে নেন, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ভুলে খুশি মনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করেন।

কোরবানির ঈদের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- এর রয়েছে প্রসারিত এক সামাজিক তাৎপর্য। এই ঈদে নতুন করে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন পাড়া বা গোষ্ঠীভিত্তিক সংঘবদ্ধ হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়। ঈদুল আজহা এলেই তারা সব ভেদাভেদ ভুলে ও পূর্বশত্রুতা মিটমাট করে এক হয়ে যায়। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাদের এ সংঘবদ্ধতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরিক করা ঈদুল আজহার শিক্ষা। এই শিক্ষা বিভেদ-বৈষম্যের সামাজিক প্রেক্ষাপটে খুবই জরুরি। ঈদকে আনন্দঘন করতে অবশ্যই নগরীর পরিচ্ছন্নতার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। পশু কোরবানি-পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নাগরিক ও সিটি করপোরেশনকে তৎপর থাকতে হবে। রাস্তার ওপর বা যত্রতত্র কোরবানি দেওয়া অনুচিত। এতে পরিবেশ দূষিত হয়, দুর্গন্ধ ছড়ায়। ঈদের পবিত্রতা সব ক্ষেত্রেই বজায় রাখা প্রয়োজন। সংগত কারণেই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারাও যেন পশু কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত