ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরবানির পশুর চামড়া

সর্বোত্তম ব্যবহার জরুরি
কোরবানির পশুর চামড়া

প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারা দেশে কোরবানিকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। গত বছরের তুলনায় এবার ৯১ হাজার ৪৯টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে। কোরবানি হওয়া গবাদিপশুর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০টি গরু, ১ লাখ ৭ হাজার ৮৭৫টি মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৮টি ছাগল, ৫ লাখ ২ হাজার ৩০৭টি ভেড়া এবং ১ হাজার ২৪২টি অন্যান্য পশু। অর্থাৎ অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও কোরবানি দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মানুষ তার সাধ্যমতো কোরবানি দিয়েছে। আমরা জানি কোরবানি ঘিরে পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় উপলক্ষ্য ঘটে। এই পশুর চামড়া যেমন ট্যানারি শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখছে, তেমনি কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ গরিব ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সংস্থায় কার্যনির্বাহে কাজে লাগছে। অর্থাৎ এর একটি সামাজিক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর চামড়া বিক্রি নিয়ে চলছে এক ধরনের অস্থিরতা। এতে করে চামড়ার যথাযথ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ট্যানারি শিল্পের বিরাজমান সমস্যার কারণে চামড়ার যথাযথ ব্যবহারও কমে আসছে। বিষয়টি আমাদের জন্য শুভ নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য বেঁধে দেয়া হলেও কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আবার যে দাম দেয়া হয়েছে সে দামেও চামড়া বিক্রি করা যায়নি। অনেকটা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে কোরবানি দাতার বাধ্য হয়েছে। তার মানে গত কয়েক বছরের মতো এবারও একই খারাপ অবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে লাভের আশায় চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। প্রকাশ, রাজধানীতে ২৫ থেকে ৩০ ফুট আকারের একেকটি বড় গরুর চামড়া মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে চামড়া সংগ্রহকারী মৌসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, যে দাম হওয়ার কথা তার অর্ধেক মূল্যে বেচে দিতে হয়েছে চামড়া। বলা যায়, সিন্ডিকেটের হাতেই ছিল চামড়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ। এদিকে বৃষ্টির মধ্যে চামড়া কেনাবেচা নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। আবার গত কয়েক বছরের মতো এবারও ছাগল ও খাসির চামড়ার কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ক্রেতা না পেয়ে অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় এসব চামড়া রেখে যান। তবে ক্রেতা না থাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা লোকজনও কোনো কোনো স্থানে এসব চামড়া ফেলে দিয়েছেন। এই অবস্থায় কোরবানির পশুর চামড়া পাচার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি নির্দ্বিধায় হয়, যা অনভিপ্রেত।

এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোরবানির পশু আমাদের অর্থনীতির অন্যতম খুঁটি। গ্রামীণ অর্থনীতিকে সক্রিয় রাখছে এটা। আর শুধু গবাদি পশু কেনাবেচা নয়, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুর চামড়া ব্যবসাও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাংলাদেশে সারা বছর যত চামড়া বাজারে আসে, তার ৬০ শতাংশই আসে এই ঈদের সময়। আর এ সময় যেসব পশু কোরবানি দেয়া হয়, সেগুলো খুব যত্নে লালনপালন করা হয়। সেজন্য দেখা যায়, চামড়ার মানও ভালো থাকে; কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। এটা আমাদের অক্ষমতা ও অসক্ষমতাই বলতে হবে। আমাদের অবশ্যই পশুর চামড়া ব্যবহারে টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এজন্য ট্যানারি শিল্পের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। তাহলে বিপুল রপ্তানি আয় সম্ভব। এই নিয়ে যথার্থ পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত