রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

মানুষের ভোগান্তি

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদের দিন থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবারও বিকেলের পর রাজধানীতে ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল। শনিবার সকালে বৃষ্টির মাত্রা ছিল কম। তবে আকাশে ছিল মেঘ। দুপুরের পর আকাশ অন্ধকার করে নামে মুষলধারে বৃষ্টি; যা প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। বিকেলে বৃষ্টি হওয়ায় ঈদের আনন্দেও ভাটা পড়েছে। এমন টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই থইথই পানি। জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীবাসীর সঙ্গে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষও বিপাকে পড়েছে। ঈদের ছুটিতে যারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের অনেককেই সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। তবে এই সময় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যানজট দেখা দেয়নি। এদিকে গণমাধ্যমের সূত্রে প্রকাশ, শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সব মহানগরীতেই কমবেশি জলাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়েছে। নগরীগুলোর জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেক পুরোনো। নগর উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান এখনও সুদূরপরাহত। বিশেষ করে বর্ষায় আমাদের কাছে অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জলাবদ্ধতা। বলা যায়, জলাবদ্ধতাকে সঙ্গী করেই নগরবাসী এগিয়ে চলছে।

 

এদিকে তথ্য অনুযায়ী, টানা বৃষ্টির কারণে পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দীন রোড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আজিমপুর কলোনিতে পুকুরের পানি বেড়ে ও বৃষ্টির পানি সড়ক থেকে সরতে না পারায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সড়কের পানি ঢুকছে বাসায়ও। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। অন্যদিকে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকায়। এ এলাকায় পানি দুই দিন ধরেও সরেনি। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। এছাড়া ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, গ্রিন রোডে, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এবারের জলাবদ্ধতা দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য ড্রেনে ফেলাকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। বলা হয়, পশুর বর্জ্য নির্ধারিত জায়গা বা ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনে ফেলায় তা ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেও অনেকটা অচল করে দেয়। পশুর এই কঠিন বর্জ্য প্রতি বছরই কোরবানির সময় অনেক জায়গায়ই ড্রেন আটকে দেয়। জানা যায়, এবার কোরবানির আগের দিন ১১ লাখ প্লাস্টিক, পলিব্যাগ ও বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছে সিটি করপোরেশন। উল্লেখ্য, এবার ঈদে ঢাকায় কমপক্ষে ৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে বলে জানা যায়। ফলে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পশুর হাটগুলো ঘিরেও বর্জ্যের স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, পশুর বর্জ্যই জলাবদ্ধতার কারণ তা বলা যাবে না। অন্য অনেক কারণ অনেক আগে থেকেই বিরাজমান, যা সিটি করপোরেশনেরও অজানা থাকার কথা নয়। দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা নৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

 

জলাবদ্ধতার জন্য নাগরিক থেকে কর্তৃপক্ষ- কেউই দায় এড়াতে পারে না। বছরের পর বছর এ জলাবদ্ধতার সমস্যায় আমরা আমাদের কারণেই জর্জরিত হই। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। তবুও হচ্ছে। কারণ আমাদের নালা, খালগুলো পলথিন, বোতল, আর প্লাস্টিকে ভরা। আমরা আমাদের ময়লা, আবর্জনাগুলো নিজেদের খামখেয়ালিপনায় সেখানেই ফেলে দিই। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষও বর্জ্য ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে- এমন দাবি করা যাবে না। সংগত কারণেই এই নিয়ে টেকসই কর্মপন্থা জরুরি।