ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনিয়ন্ত্রিত হর্নের শব্দ

শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে শিশুরা
অনিয়ন্ত্রিত হর্নের শব্দ

রাজধানী শহর ঢাকা রীতিমতো দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বায়ুদূষণে এই শহর কখনও বিশ্বের শীর্ষস্থানে, কখনো বা আশপাশে অবস্থান করছে। ধুলোবালির এই শহরে শব্দদূষণও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গাড়ির হর্নের উচ্চ শব্দ অনেকের শ্রবণশক্তি হারানোর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখানে থেকে অনেকে শব্দদূষণের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে গেলেও গ্রাম থেকে আসা মানুষ শব্দদূষণের তীব্রতায় সহসাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারণ গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসে হঠাৎ এত শব্দের মধ্যে তারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। শিশুরা মাথা ধরা ও বিষণ্ণতায় ভুগছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিতভাবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমরা একটি বধির জাতিতে পরিণত হব। আমরা একদিকে যেমন একটি বধির প্রজন্মের দিকে ধাবিত হচ্ছি, তেমনি প্রাণিকুলও ধ্বংস করছি। গাড়ির শব্দে বিরক্ত রাজধানীবাসী। অত্যধিক গাড়ির হর্নের শব্দে বধির হওয়ার পথে সাধারণ মানুষ। বাদ যাচ্ছে না ছোট্ট শিশুরাও। রাস্তায় চলতে-ফিরতে অযথা হর্ন বাজায় অনেকে। কেউ তো আবার হর্ন চেপে ধরে রাখে দীর্ঘক্ষণ। হর্ন বাজানো যেন ছেলেখেলা! এই খেলা যে অনেকের জীবনকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়, তা হয়তো হর্ন ব্যবহারকারীরা জানেনও না।

হর্নের শব্দের বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। ছোট্ট শিশুরা প্রতিদিন সকাল হলেই স্কুলে ছুটছে। এদিকে স্কুলের সামনে দিয়ে চলা যানবাহন জ্যামে বসে হাইড্রোলিক হর্ন বাজাতে থাকে। এতে যেমন পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে শিশুরা। হর্ন ধীরে বাজানোর কথা বললেও ভ্রুক্ষেপ করছে না, বরং তেড়ে আসছে কেউ কেউ। হর্ন বাজানো বন্ধ হচ্ছে না হাসপাতালের সামনের রাস্তায়ও! রিকশার টিংটিং শব্দ কিংবা গাড়ির শব্দ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাজিয়ে চলেছে অনেকে। অসুস্থ রোগীর কথা ভাবছে না তারা। তাদের শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া। শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশ। দিন-রাত রাস্তার যানজট নিয়ন্ত্রণে তারা নিরলস পরিশ্রম করছেন। আর অ্যাম্বুলেন্সের হর্ন, প্রাইভেট গাড়ির হর্ন, বাসের হর্ন, বেপরোয়া মোটরসাইকেলের হর্ন যে কারো শ্রবণশক্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। আবার উড়োজাহাজ কিংবা ফাইটার প্লেনের শব্দে ঘুম থেকে আঁতকে উঠছে দুধের শিশুরা। স্মর্তব্য, রাজধানী ঢাকা শহরের ১৭টি নীরব এলাকা হাসপাতালের সামনের সড়কের শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয় করে দেখা গেছে, সেখানে সর্বনিম্ন ৬৯.৭ ডেসিবল এবং সর্বোচ্চ ৮৯.৯ ডেসিবল। যেখানে নীরব এলাকার জন্য শব্দের আদর্শ মান দিনের বেলায় থাকার কথা ৫০ ডেসিবল। পর্যবেক্ষণে বলা যায়, ঢাকা শহরে নীরব এলাকা বলতে আদৌ কিছু নেই।

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত শব্দের ভেতর থাকলে হাইপার টেনশন, হৃদেরাগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি কমা, স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যার মতো কঠিন রোগে ভুগতে হতে পারে। বিশেষত, শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কারণ তাদের ওপর শব্দদূষণের প্রভাব স্থায়ী হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা অতিরিক্ত শব্দদূষণের শিকার হলে সন্তানদের বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ১২০ ডেসিবল শব্দ কারও কান নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তাই শব্দদূষণের ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শব্দদূষণ রোধে সবার আগে জরুরি অত্যাধুনিক হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধ করা। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালকে নীরব এলাকা ঘোষণার পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। অধিকন্তু জনগণের মধ্যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষত অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকার জন্য গাড়িচালকদের সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। কারণ গাড়িচালকের বাজানো হর্নের কারণে তিনি নিজে, তার সন্তান, আত্মীয়স্বজন সবাই শব্দদূষণের ভয়াবহতার শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ সমন্বিত কর্মপন্থা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত