ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী

কারণ অনুসন্ধান জরুরি

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে বিনিয়োগ। যদিও জিডিপির তুলনায় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আশানুরূপ নয় বলে বোদ্ধাদের অনুযোগ রয়েছে। তবে পরিমাণের দিক থেকে বরাদ্দ কম নয়। অন্যদিকে পারিবারিক পর্যায়ে সন্তানের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও বিনিয়োগ বাড়ছে। তার পরও শিক্ষার্থীর স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা ড্রপআউট একটি বড় সমস্যা হিসেবে বিরাজমান। ভর্তি হওয়ার পর ওপরের শ্রেণিতে ওঠার ধাপে ধাপে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি দেখা যায় এসএসসির পর। প্রকাশ, দেশে মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) পাস করার পর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার আগে ঝরে পড়ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এদের একাংশ কলেজে ভর্তির আগেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলছে। আর ভর্তি হলেও পরীক্ষা দিচ্ছে না বাকিরা। যেমন ২০২০ সালে এসএসসি পাস করলেও ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়নি প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী। তবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে মাঝপথে শিক্ষাজীবন শেষ করার কারণ জানতে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে নেই কোনো গবেষণা। এসব শিক্ষার্থী কেন পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে বা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কোথায় যাচ্ছে- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা থাকলে ঝরে পড়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। মোটাদাগে যা বলা হচ্ছে তা হলো, করোনা সংক্রমণের অভিঘাতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। সত্য বটে, তবে একমাত্র সত্য বলে ভাবার কারণ রয়েছে কি?

গত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা যায়, এসএসসির পর, আরও স্পষ্ট করে বললে এইচএসসির আগেই ঝরে পড়ার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। যেমন ২০১৭ সালে এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যায়ে ঝরে পড়েছে প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী। অথচ ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ে লাখের কাছাকাছি, অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় ১৩ গুণেরও বেশি। বিষয়টি বিস্ময়কর বৈকি! কেন এমন ঘটনা ঘটল? যেহেতু এই নিয়ে কোনো গবেষণা তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই নানা মুনির নানা মন্তব্য লক্ষ করা যায়। বলা হচ্ছে, করোনার পর অনেক মেয়েরই বাল্যবিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অনেকের মধ্যে মোবাইল আসক্তি দেখা দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মেয়েরা যৌন হয়রানিসহ নানা সমস্যার মধ্যে পড়ছে। সে কারণে এসএসসি কোনো রকম পাসের পরই বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দেওয়াকে নিরাপদ মনে করছেন। আর ছেলেরা কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হয়ে যাচ্ছে। করোনাকালের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক পরিবারই তাদের ছেলে সন্তানকে কাজে নামিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া, ছোট সিলেবাসে এসএসসি শেষ করতে পারলেও উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে অনেকেই আর পড়া চালিয়ে নিতে পারছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ড্রপআউটের পাশাপাশি ফেলের সংখ্যা বাড়ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, অপরচুনিটি কস্ট। স্কুলে না গিয়ে দিনমজুর হিসেবে কাজ করলে কিছু টাকা আয় করা যায়। সে কারণে অনেকে স্কুলে যায় না। এক্ষেত্রে পরিবারও তাদের উৎসাহিত করে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ে দিয়ে মেয়ের দায়িত্ব-কর্তব্য দ্রুত সম্পন্ন করতে হয় বাবা-মাকে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিষয়টি শুধু করোনা সংক্রমণের কারণে বেড়েছে- এমন দাবি করা যায় না। বরং বলা যায়, সংক্রমণকালে পরিস্থিতি যথাযথভাবে সামাল দেয়া সম্ভব না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। তবে নেপথ্যের কারণ আরও গভীরে প্রোথিত। এ জন্য অবশ্যই ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাকর্ম জরুরি। প্রয়োজনে শিক্ষার ধারা পরিবর্তন করতে হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে। এতে দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী বিদেশে পাঠানো যাবে, দেশ ও পরিবারের উন্নয়ন হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ ও পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়াতে হবে।