ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু ভয়ানক রূপ নিতে পারে

নেয়া হোক যথাযথ পদক্ষেপ
ডেঙ্গু ভয়ানক রূপ নিতে পারে

ঘুরেফিরে ডেঙ্গুর ভয়ানক রূপটি প্রকট হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ঘটছে মৃত্যু। সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে- এমন ইংগিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এবার ঢাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই উচ্চ ঝুঁকিতে। ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০১৯ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক-বর্ষা জরিপের তথ্য বলছে, এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও কয়েক গুণ খারাপ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ড ছিল ২১টি। স্মর্তব্য, চলতি বছরের গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৭১ জন। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। এই সময়ে মারা গেছেন পাঁচজন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭৮ জন। দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বছরে তিনবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা জরিপ করে। প্রাক-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী জরিপ। গত ১৭ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবারের প্রাক-বর্ষা জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ডেঙ্গুর সব সূচকই এবার উদ্বেগজনক। যেমন এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। আর কতগুলো বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে, তা পরিমাপের সূচক হলো হাউস ইনডেক্স। প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপের এই দুই সূচকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটির মগবাজার, আদাবর, মোহাম্মদপুর, মণিপুর ও উত্তর বাড্ডা এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। আর দক্ষিণ সিটির নবাবপুর, ডিস্টিলারি রোড, আজিমপুর, হাজারীবাগ, কাঁঠালবাগান ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এবার এডিস মশা পাওয়া গেছে এমন বাড়ির শতকরা হারও (হাউস ইনডেক্স) উদ্বেগজনক। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এবার বহুতল ভবনে (প্রায় ৪৪ শতাংশ) এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। এর পর সবচেয়ে বেশি লার্ভা (প্রায় ৪০ শতাংশ) পাওয়া গেছে একক বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে। এসব স্থানে পানি জমে থাকা ভেজা মেঝে, প্লাস্টিক ড্রাম ও পাত্র এবং ফুলের টবে লার্ভা বেশি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ পর্যবেক্ষণে বলা যায়, ডেঙ্গু বিস্তারে যেমনি সিটি করপোরেশনের দায় রয়েছে, তেমনি রাজধানীবাসীর অসচেতনতাকেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েক মাস আগে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করলেও ঢাকার দুই সিটি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আর নগরবাসীকে সম্পৃক্ত না করতে পারলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে বলেই প্রতীয়মান। ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোকে (বেশি সংক্রমণ এমন এলাকা) আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে হটস্পটগুলোতে উড়ন্ত মশা মারতে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা সবাইকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ডেঙ্গুর ভয়ানক রূপ সামাল দিতে সারা বছরই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। এই নিয়ে আমাদের সবার সুমতি উদয় হোক- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত