ছিনতাইকারীর উৎপাত

প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ছিনতাইকারীদের উৎপাত কমবেশি সারা বছরই পরিলক্ষিত হয়। তবে প্রতিবছর ঈদের আগে ও পরে রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এবার ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে অনুরূপ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা গেছে। বলা যায়, রাতের ঢাকায় বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ছিনতাইকারীরা। ঈদ শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষ তাদের টার্গেট। অনেকেই ছিনতাইকারীদের শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। কেউ বাধা দিতে গেলে আহত-নিহত হচ্ছেন। ছিনতাইকারীদের হাতে খোদ পুলিশ সদস্যই মারা গেছেন। ঈদের রাতে হাতিরঝিলে রাকিবুল হাসান রানা নামে একজন সংবাদকর্মীকে ছুরি মেরে জিনিসপত্র নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। বিপদের ভয়ে অনেকেই ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব তুলে দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও ছিনতাইকারীদের এহেন তৎপরতা বেদনাদায়ক। উল্লেখ্য, পুলিশের ডেটাবেজ অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ৬ হাজার ছিনতাইকারী আছে। প্রশ্ন হলো, ডেটাবেজে তথ্য থাকার পরও বারবার তারা কীভাবে ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বলেন, ‘এদের প্রত্যেকে গ্রেপ্তার হয়েছে বলেই আমাদের ডেটাবেজে নাম এসেছে। আমরা প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। গ্রেপ্তারের পর একটা আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের জামিন পাওয়ার অধিকারও রয়েছে। তারা আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে বের হয়ে আসে। এর পর তাদের আমরা আবার অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করি।’ এ অবস্থায় কি বলা যায়, এ বিষয়ক আইনটি সংশোধনের দাবি রাখে? বিষয়টি পর্যালোচনা দরকার।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাজধানীতে রাতবিরাতে চলাচলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গায় কেউ না কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন, খোয়াচ্ছেন সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার কিংবা টাকা-পয়সা। বাধা দিলেই ছিনতাইকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেকে হচ্ছেন আহত, ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও। এই অবস্থায় ডিএমপি কমিশনার বরাতে প্রকাশ, রাতের ঢাকা শহর ছিনতাইকারীমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতিবাচক সংবাদ হলো, পুলিশ কনস্টেবল ও সংবাদকর্মী দুটি ঘটনাতেই পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আইনানুগভাবে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে। এতে এটা নিঃসন্দেহে ছিনতাইকারীদের জন্য আতঙ্কের ব্যাপার হবে। এদিকে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েক দিনে দেড়শ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত, ঈদের ছুটি শেষে শনিবার ঢাকায় ফিরে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ফার্মগেট এলাকায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান। বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে অন্য একটি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় তিন ছিনতাইকারী তার পিছু নেয়। একজন মনিরুজ্জামানের সামনে দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ নিতে চায়। কিন্তু তিনি বাধা দেন। পরে পেছন থেকে একজন মনিরুজ্জামানের উরুতে ছুরি মারে এবং আরো আঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে পশ্চিম দিকে চলে যায়। ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাইকারী কর্তৃক এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের আরও রোমহর্ষক ঘটনা আগেও ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ছিনতাই হ্রাসে তৎপরতা দেখিয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, ছিনতাই নিবৃত্ত করা যায়নি। ঢাকাবাসী রাতে তো বটে, দিনের বেলায়ও ছিনতাইকারীর আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারছে না। বিষয়টি অনভিপ্রেত।

আমরা যতটুকু জানি, পুলিশ শুধু ছিনতাইকারীর ডেটাবেস তৈরির পাশাপাশি ছিনতাইয়ের স্পট এবং ধরন সম্পর্কেও অবহিত হতে পেরেছে এবং প্রতিনিয়তই আমরা মিডিয়ায় ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়ে থাকি। তারপরও ছিনতাইবারী বেপরোয়া মনেবৃত্তি থামছে না- এটা বাস্তবতা। অর্থাৎ শুধু গ্রেপ্তার করে যে ছিনতাই থামানো যায় না, তা স্পষ্ট। এর অন্তর্নিহিত কারণ অবহিত হওয়া জরুরি। আইনি কোনো ফাঁকফোকর থাকলে তা সমাধানের ব্যাপারে ভাবতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। সাধারণ নাগরিকদেরও সতর্ক থাকতে হবে।