আপনাদের ভাবনা

অপ্রতিরোধ্য কিশোর গ্যাং

মো. আবদুর রহিম

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ আজকে যে শিশু বা কিশোর সে হবে আগামী দিনের কর্ণধার। যারা কাজ করবে সমাজের জন্য, মানুষের জন্য, দেশের জন্য। যারা নেতৃত্ব দিবে দেশকে এবং তাদের ভিবিন্ন সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে নিজ দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে অংশীদার হবে। তাদের সফল ও গৌরবময় কাজের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে নিজ দেশকে নতুন করে তুলে ধরবে। বিশ্বদরবারে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, বর্তমানে আমার এই নতুন প্রজন্ম ভয়াবহ হুমকির মুখে। আমাদের সোনালি কিশোররা হারিয়ে যাচ্ছে গহিন অন্ধকারে। জড়িত হচ্ছে মাদক, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধে এবং প্রকাশ করছে নিজেকে এক একটা কিশোর গ্যাং হিসেবে।

কিশোর অপরাধের অন্যতম একটি মাধ্যম হলো কিশোর গ্যাং। কিশোরদের মধ্যে দিন দিন ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর গ্যাং তৈরির এই প্রবণতা। বিভিন্ন নামে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলছে কিশোর গ্যাং। জাতীয় দৈনিকের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকায় অন্তত ৫ শতাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সক্রিয় ৭০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং। র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ৭০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এর মধ্যে উত্তরায় ২২টি ও মিরপুরে ১০টি গ্যাং সক্রিয়। এ ছাড়া তেজগাঁও, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, মহাখালী, বংশাল, মুগদা, চকবাজার ও শ্যামপুরে একাধিক গ্যাং সক্রিয়।

কিশোররা এসব কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, হত্যা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং মাদক সেবন ও সরবরাহের মতো গর্হিত কাজে। এসব গ্যাং কর্তৃক ছিনতাই করা, ছিনতাই করতে গিয়ে হত্যা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের টিজ করা, মেয়েদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করা, প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা এখন হয়ে উঠেছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জাতীয় দৈনিকের তথ্য মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্র জানায়, গত ১১ মাসে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে কমপক্ষে ৩০ জন খুন হয়েছে। গত দুই মাসে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এই নগরীতে প্রায় ৫০ জন কিশোর খুন হয়েছে। আর গত ১৭ বছরে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে ১২৫ জন খুন হয়েছে। এদিকে ছিনতাইকারী কিশোর গ্যাংয়ের হাতে অন্ততপক্ষে শতাধিক পথচারী আহত হয়েছে। কিশোর গ্যাং বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণগুলো হলো- দরিদ্রতা, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, শিক্ষার অভব, পারিবারিক সমস্যা, হতাশা ও বিষণ্ণতা, বন্ধুদের প্ররোচনা ইত্যাদি। এসব গ্যাং বেড়ে ওঠে এলাকার কিছু বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায়। এসব বড় ভাই কিশোরদের দরিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে ছিন্নমূল পরিবারের কিশোরদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টেনে আনে এবং সাহসী ও বুদ্ধিমান কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো মারাত্মক কাজে ব্যবহার করে। আবার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, বিভিন্ন টোকাই, পথশিশুরা অর্থের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে ভিবিন্ন অপরাধ করতে শুরু করে, যার মাধ্যমে তা কিশোর গ্যাংয়ে রূপান্তরিত হয়। অন্যদিকে বর্তমানে টিকটক, লাইকি ইত্যাদি নানান ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পথভ্রষ্ট হয়ে তরুণরা কিশোর গ্যাং তৈরির প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম রক্ষায় কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সরকারের উচিত দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা। এছাড়া কিশোরদের মানসিক কাউন্সেলিং ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে বিভিন্ন সামাজিক সংঘঠনেরও উচিত এগিয়ে আসা। কেননা আমরা যদি তাদের এসব অপরাধ থেকে রক্ষা না করি তাহলে আগামীর বাংলাদেশ অপরাধের অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত হবে এবং আমাদের তরুণ সমাজ ধীরে ধীরে অপরাধের রাজ্যে হারিয়ে যাবে।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়