হতাশা মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির প্রধান কারণ

রুহানা আক্তার বৃষ্টি

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যস্ত নগরীর মানুষগুলো ক্রমশ রোবটিক হয়ে যাচ্ছে। সময়ের ছকে আঁকা ব্যস্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারা। এই পার্থিব জীবনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা আমাদের শরীরের যত্ন এবং মনের খোঁজ নিতে ভুলে যাই। আমরা মাঝে মাঝে শারীরিক রোগের প্রতি মনোযোগ দিই এবং এর প্রতিকার করার চেষ্টা করি। তবে মনটা যে শরীরের একটা অংশ, তা ভুলে গেলে চলবে না। মানসিক সুস্থতা বলতে বোঝায়, একজন মানুষ কতটা নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, তার বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল কাজকর্মে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারে, কোন বিষয়ে তার কতটুকু সক্ষমতা আছে তা অনুধাবন করতে পারে, যেকোনো বিষয়ে দ্রুততম সময়ে গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে, তা মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রমাগত হতাশা বৃদ্ধির ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৩-৪ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যে শতকরা ১৮.৭ শতাংশ এই সমস্যায় ভুগছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে। এছাড়া, ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে ১৫-২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে হতাশা কাজ করার ফলে তারা নতুন কোনো কিছু করতে বা শিখতে আগ্রহ পায় না। অপরদিকে, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ১০ হাজার মানুষ মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বছরে প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। এই আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ২০-৩৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা বেশি।

মানসিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে কিশোর-কিশোরীরা। প্রতি বছর প্রায় ৪৬ হাজার কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করে। তাদের অধিকাংশের আত্মহত্যার কারণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফলাফল ভালো না হওয়া। পরিবার ও সমাজের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং আত্মহত্যার পথ অবলম্বন করে। বৈশ্বিকভাবে ১০-১৯ বছর বয়সী প্রতি ৭ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ১জন মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। আবার, নারীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের ১ জন জটিল মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

জীবনে চলার পথে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। হতে পারে সেটা কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা, প্রিয়জনের চলে যাওয়া, আর্থিক সমস্যা, পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়া ইত্যাদি। মানুষ জীবনের খারাপ সময়ের মাঝে বিচরণ করতে করতে যখন আর কোনো উপায় খুঁজে পায় না, তখনই তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং সে বিষন্নতা থেকে আত্মহত্যা করে। মানসিক রোগ আক্রান্ত অথবা হতাশাগ্রস্ত থাকা মানুষের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন অপর মানুষের সাহচর্য ও পরিচর্যা। একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের মাঝে এমন অনেকেই আছে যারা ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে; অথচ কারো সঙ্গে শেয়ার করতে পারছে না। আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা প্রয়োজন। তাদের সমস্যার ধরন বুঝে সুষ্ঠু সমাধান খুঁজে দেয়া এবং বিষণ্ণতা থেকে নিরাপদ না হওৃয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কাউকে না কাউকে থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া, যথাসম্ভব মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ইতিবাচক চিন্তা করা, সাময়িকভাবে কোনো স্থানে ঘুরে আসা, বই পড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো, সুষম খাদ্য গ্রহণ, ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য পরিহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ইত্যাদি বিষয় শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবে এবং হতাশা থেকে মুক্তি দেবে।

শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা