ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৃদ্ধি পাচ্ছে নোমোফোবিয়া, কমছে পাঠক

সুমন চৌধুরী
বৃদ্ধি পাচ্ছে নোমোফোবিয়া, কমছে পাঠক

‘বই আছে পাঠক নেই’- বই পড়ার জগতে এত নিষ্ঠুর বাক্য হয়তো দ্বিতীয়টি নেই। ওই বাক্যটি দৃষ্টিগোচর বা শোনা মাত্র অনেকের স্বাভাবিক অনুভূতি হলেও ভালো পাঠকদের কাছে মর্মস্পর্শী অনুভূতি হবে তা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। কমছে পাঠক, বাড়ছে নোমোফোবিয়া। মুঠোফোন ব্যবহার করতে না পারা অথবা মুঠোফোন ব্যতীত থাকার ভয় থেকে তৈরি হওয়া আতংক বা উদ্বিগ্নতাকে নোমোফোবিয়া বলা হয়। According to Oxford Dictionary, "Fear or worry at the idea of being without your mobile phone or unable to use it.”

বাড়ছে প্রযুক্তি, কমছে বই পড়ুয়া। ফলাফলস্বরূপ, হ্রাস পাচ্ছে স্মৃতিশক্তি, উদ্ভাবনী দক্ষতা, নতুনত্ব, সৃজনশীলতা ও ব্যয় হচ্ছে মূল্যবান সময়। বর্তমানে আমরা এমন এক সময় অতিবাহিত করছি, যখন কাগজে ছাপানো একগুচ্ছ পৃষ্ঠার সমন্বয়ে তৈরি চকচকে বইগুলোর ইচ্ছাকৃত পরিবর্তক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।

দেশের বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিটা জেলা-উপজেলার প্রধান গ্রন্থাগারসহ ইত্যাদি স্থানে বই আছে; কিন্তু নেই বই পড়ার নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রাণ। গ্রন্থাগারের এমনও জায়গায় বই আছে, যা গত কয়েক বছরে খোলাই হয় নেই।

বই অনীহার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমাদের মুঠোফোন। মুঠোফোনে খুব বেশি আসক্ত বিষয়টাই নোমোফোবিয়া। শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধা সবাই আমরা মুঠোফোনে আসক্ত। বিশেষ করে শিশু-যুবকদের মধ্যে নোমোফোবিয়ার শতাংশ বেশি। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মুঠোফোনের বিশ্রাম নেই এমনকি অনেকেই রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমিয়ে মুঠোফোনের খারাপ ব্যবহার করে। চব্বিশ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকি ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার, লিংডিন, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ ইত্যাদি মিডিয়ায়। আর মোবাইল গেম আসক্তি ব্যক্তি যে খুবই মারাত্মক নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সব ধরনের আসক্তির ফলে আমরা পড়তে গেলে মুঠোফোন, খেতে গেলে মুঠোফোন, খেলতে গেলে মুঠোফোন, এমনকি ঘুমাতে গেলেও মুঠোফোন ব্যবহার না করে পারতেছি না।

সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের এক-তৃতীয়াংশ (৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ) চরম মাত্রায় নোমোফোবিয়ায় আসক্ত। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এ আসক্তি সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, মাত্রাতিরিক্ত এবং অসচেতন ব্যবহার যুবসমাজকে নোমোফোবিয়ার দিকে ধাবিত করে। যেটাকে এক ধরনের ‘মানসিক সমস্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হন, তারা মুখোমুখি কীভাবে একজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হয় তা ভুলে যান।

পরিশেষে, সবার কাছে অনুরোধ থাকবে শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত সবাইকে নোমোফোবিয়া নামক নীরব ঘাতক থেকে সচেতন রাখার জন্য। যেহেতু আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাই শিশুর শারীরিক-মানসিক সুস্থতা চিন্তা করে, শিশুর উন্নতির চিন্তা করে নোমোফোবিয়া থেকে দূরে রেখে বই পড়ার মাধ্যমে শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলব। সর্বোপরি আমাদের আগামী প্রজন্ম যাতে বলতে পারে বাড়ছে পাঠক, কমছে নোমোফোবিয়া- এমন বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

শিক্ষার্থী

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত