বাজারে অসহায় মানুষ

সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রণ করুন

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য বহুদিন ধরে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যাপনচর্চাকে দুর্বিষহ করে তুললেও নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বরং বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বেড়েই চলছে, আর সেটা কারণের চেয়ে অকারণেই বেশি ঘটছে। কয়েকদিন আগে ঢাকার বাজারে অবিশ্বাস্যভাবে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে হাজার টাকার অধিক ওঠেছিল। এখনো বাজারে কাঁচামরিচের আকাশছোঁয়া দামের রেশ শেষ হয়নি। এরমধ্যেই আবারো বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র একটা করে পণ্য ধরে ধরে পকেট কাটছে ভোক্তা সাধারণের। এভাবে দফায় দফায় বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অনেক আগেই। নিত্যপণ্য ও সেবার দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বিপরীতে বাড়েনি মানুষের আয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে আয় ও ব্যয়ের মধ্য সমন্বয় করতে দৃশ্যত অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন সব খরচ কমিয়েছেন। এতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় খাবার উপকরণ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে বাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছেন ওএমএসের লাইনে। এ ছাড়া খরচ কমাতে পরিবার-পরিজনকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ দিকে খাবার খরচ কমানোর ফলে বাড়ছে পুষ্টিহীনতা। এতে বাড়ছে রোগবালাই। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। অর্থাৎ একদিকে সামাল দিতে গিয়ে অন্যদিকে টান পড়ছে। এভাবে পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না, এমন মানুষ যেসব দেশে বেশি, সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বাংলাদেশে এখন ১২ কোটি ১০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। একটি মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়া দেশ, যে দেশ আবার অচিরেই উন্নত রাষ্ট্রে উপনীত হওয়ার রূপকল্প তৈরি করেছে, এমন একটি বিভোর জাতির জন্য এ অবস্থা কিছুতেই মানানসই হতে পারে কি! বাস্তবে আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প কিংবা বিপুলাকার অবকাঠামোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে না, বরং কমছে। যা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়। অথচ অর্থনৈতিক উন্নতির সমান্তরালে জীবনমান উন্নয়নের সম্ভাবন বিরাজমান ছিল। কিন্তু আমরা দেখছি সেখানে বৈষম্যই প্রকট হয়েছে। দুর্নীতি আর সীমাহীন বাজার কারসাজি সাধারণ মানুষের জন্য এখন টিকেই থাকাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছিল। এটা সত্য। কিন্তু এখন তো বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে। তবে দেশের বাজারে কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এটা দুঃখজনক। এদিকে প্রায় সবারই আয় কমেছে, কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় থেমে থাকেনি। আয়ও বাড়েনি। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে মানবেতর জীবন থেকে উদ্ধারের জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

মানুষের সমস্যা যতই হোক, খাওয়া তো বাদ দেয়া যাবে না। তাই অন্তত নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকারকে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংসদে বলেছেন, বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে জটিলতা আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থে এই জটিল ব্যুহ অবশ্যই ভাঙতে হবে। আশা করা যায়, সরকার এই নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। তাহলে জনমনে স্বস্তি ফিরবে।