ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যালোচনা

ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অর্থনীতি

অভিজিৎ বড়ুয়া অভি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অর্থনীতি

ভারতে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। স্বাধীনতা দিবসটি ভারতের জন্য ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং একটি স্বাধীন জাতির প্রতিষ্ঠা দিবস। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বর্তমানে ভারত ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে, জাপান এবং জার্মানিকে ছাড়িয়ে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম স্টক মার্কেট হবে। ফরাসি অর্থনীতিকে পেছনে ফেলে, ভারত ২.৬৬ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকৃত জিডিপিসহ বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতিও বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে ভারত একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। পশ্চিমা নেতারা এবং দেশগুলো ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। শিল্প খাতকে বাড়ানো এবং রপ্তানি বাড়াতে ভারত ২০২১ সাল থেকে, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরিশাসের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। রাশিয়া, যার পশ্চিমের সঙ্গে বাণিজ্য গত বছর ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে হ্রাস পেয়েছে, তারাও ভারতের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আশা করে যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি এই বছর ৫.৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ সব বড় উদীয়মান এবং উন্নত অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে। যদি ভারত তার গতি বজায় রাখতে পারে, তাহলে ভারত ২০২৬ সালে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে জার্মানিকে ছাড়িয়ে যাবে এবং ২০৩২ সালে তিন নম্বর স্থান থেকে জাপানকে ছিটকে দেবে, সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের বিশ্লেষণ অনুসারে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো ভারতে তাদের অফিস খুলছে। অঢ়ঢ়ষব (অঅচখ) চীনের মূল ভূখণ্ডে সাপ্লাই চেইন সমস্যায় ভোগার পর ভারতে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে, ফক্সকনের প্রধানও ভারতে গিয়ে মোদির সঙ্গে দেখা করেছে। ভারতে ফার্মাসিউটিক্যালস সর্বোচ্চ সংখ্যক বিলিয়নেয়ার তৈরি করেছে যার সংখ্যা ১৩৭। ভারত বিশ্বে জেনেরিক ওষুধের বৃহত্তম সরবরাহকারী। ভারত বিভিন্ন ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনেরিক ওষুধের চাহিদার ৪০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের মোট ওষুধের চাহিদার ২৫ শতাংশ পূরণ করে। সফ্টওয়্যার এবং পরিষেবা খাত ৭৩ বিলিয়নেয়ার তৈরি করেছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ধনকুবের উৎপাদনকারী শিল্পের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারতের অটোমোবাইল এবং অটো কম্পোনেন্টস সেক্টর যেখানে ৪৫ জন বিলিয়নেয়ার উৎপাদন করে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম বাজারগুলোর মধ্যে এবং বাণিজ্যিক যানবাহন উৎপাদন বিভাগেও শীর্ষস্থানীয়। ভারতে টেক্সটাইল, পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক বিভাগ ৩৬ জন বিলিয়নেয়ার তৈরি করেছে। ভারত হলো বিশ্বের বৃহত্তম দুধ, ডাল এবং পাট উৎপাদক এবং ধান, গম, আখ, চীনাবাদাম, শাকসবজি, ফল এবং তুলা দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক হিসাবে স্থান পেয়েছে। এটি মসলা, মাছ, হাঁস-মুরগি, পশুসম্পদ এবং বৃক্ষরোপণ ফসলের অন্যতম প্রধান উৎপাদক। উচ্চ যোগ্য কর্মীদের প্রচুর সরবরাহ এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে ভারত দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী আইটি সেক্টরে একটি উল্লেখযোগ্য দেশ। ফলস্বরূপ, দেশের আইটি বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে, বিক্রয় ৩০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশিত। মাল্টিন্যাশনালরা এখন ভারতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত এবং সরকার অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি কারখানা নির্মাণের জন্য জমি সরবরাহ করে তাদের উদ্দেশ্যকে সাহায্য করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে ভারতের উৎপাদনের অংশ এউচ-এর ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে কৃষি, গার্মেন্টস এবং রেমিট্যান্স। মোট বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স থেকে। আর মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষিতে। শুধু অর্থনীতি নয়, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে খাতগুলো। বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেক চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প। বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। সারা পৃথিবীতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাতি দিয়েছে এই পণ্য। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় দেশে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ। আইএমএফের হিসাব মতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৫ সালেই আমাদের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের ফলে তৈরি পোশাক, খাদ্য-পানীয়-তামাক, ইস্পাত, সিমেন্ট, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, ভোজ্যতেল, রাবার ও প্লাস্টিক পণ্য, ইলেকট্রনিকস, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল প্রভৃতির উৎপাদন বেড়েছে, যার ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও রপ্তানি উভয়ই সম্ভব হচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে। গোল্ডম্যান স্যাক্স এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চায়না এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও বিশ্বেও সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ ম্যাকেনজি/ইউএসইউড রিপোর্টে বলা হচ্ছে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কারণে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমার বর্তমান হার হ্রাস পাওয়ায় আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে না। তাদের বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষে ৫.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে পরের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ হতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৩ শতাংশে। বিশ্বব্যাংক বলছে, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিদেশি মুদ্রার মজুতে চাপ বাড়ছে। ডলারের একাধিক বিনিময় হারের কারণে ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ বাড়ছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

নিঃসন্দেহে, আজকের বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতোই গতিময় এক প্রবৃদ্ধির পথরেখায় রয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড ১৯৮০-৯০ দশকে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর যে পথে এগিয়ে ওই মাথাপিছু আয়কে ৪ হাজার ডলারের ওপর নিয়ে গেছে, এই দশকে বাংলাদেশও সে পথে এগোনোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে (বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে)। এ পথে এগিয়ে যেতে পারলে ২০২৬-এর মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার (ইউএস)। যদি বর্তমান ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি অব্যাহত থাকে এবং প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হলে ২০৩০ সাল নাগাদ তা অর্জিত হবে। প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেলেও ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে।

বাংলাদেশে গত এক দশকে ওষুধ শিল্প থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১ গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১৪৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে একমাত্র চীনের পরেই এর অবস্থান। মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসছে এ খাত থেকে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কাজ করছেন বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মী। রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে অষ্টম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি মিলে মোট ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। এসব ব্যাংকের ১০ হাজার ৭৫২টি শাখার সমন্বয়ে বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ডিসেম্বর ২০২০ শেষে সবগুলো ব্যাংক শাখায় সাড়ে ১২.২৩ কোটির বেশি আমানতকারী ও প্রায় ১.০২ কোটি ঋণ গ্রহীতা রয়েছে। আর মোট আমানত ও ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৪ হাজার ১৪৫ ও ১১ হাজার ৫৭ বিলিয়ন টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৫টি। এই সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৭৫ কোটি টাকায়। খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে (অর্থবছর ২০২০-২১)। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ খুব সামান্যই চাল আমদানি করেছে। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয় এবং বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখন ৪০৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৩৫ লাখ কোটি টাকার বেশি।

মুসলমান আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন হয়। ৭৫ বছর আগে পাকিস্তান তার সূচনা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে শুরু করে। রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখতে, অভিজাতদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে আগ্রহী ছিলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই), বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণার তালিকায় পাকিস্তানকে ১৮০ এর মধ্যে ১২৪ তম স্থান দিয়েছে। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। সরকার জ্বালানির দাম ১৬ শতাংশ বাড়িয়েছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার সুদের হার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে, যা ২৬ শতাংশ পর্যন্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উচ্চ সুদে নেওয়া বৈদেশিক ঋণে বর্তমানে পাকিস্তান চলছে। আগামী তিন বছরে ৮০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। পাকিস্তানের বর্তমান জিডিপি, মাথাপিছু আয়, এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতি থেকে বেশী। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, পাকিস্তানের ১২৬.৩ বিলিয়ন ডলার বহিরাগত ঋণ এবং দায় রয়েছে, যার ৩০ শতাংশ চীনের কাছে পাওনা। পাকিস্তানের রুপির দ্রুত অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, দেশটি খাদ্যের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে লড়াই করছে। এই সপ্তাহে মার্কিন ডলারের কাছে রুপি রেকর্ড সর্বনিম্ন ৩০০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে। বার্ষিক খাদ্যমূল্যের মূল্যস্ফীতির হার মার্চ মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল, ভোক্তা মূল্যস্ফীতির ২৫ শতাংশ উপরে। গড়ঋ রিপোর্ট অনুসারে, সামগ্রিক রাজস্ব ঘাটতি জুলাই-অক্টোবর ২০২২-২৩ এর মধ্যে জিডিপি হবে ১.৫ শতাংশ (পাকিস্তানি রুপি ১.২৬৬ ট্রিলিয়ন)। পাকিস্তানের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের সাথে শাসনের ব্যর্থতা, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং বৈদেশিক নীতির ভুলগুলোর কারণে পাকিস্তান ভারি মূল্য দিচ্ছে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত