ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ

বাড়াতে হবে করোনার মতো সচেতনতা

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অথচ বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বা পরে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সাধারণত কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আমাদের দেশে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে মানুষের ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করা। এসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। তারা জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে শপথ নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তারা তাদের সেই অঙ্গীকার রক্ষা করার মতো সাফল্য অনেক ক্ষেত্রে অর্জন করতে পারেন না। আর সে কারণেই মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। কাজের সমন্বয় করার লক্ষ্যে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাকে দুটি সিটি করপোরেশনে ভাগ করা হয়েছে। অথচ দিনে-রাতে মশার কামড় থেকে নগরবাসী রক্ষা পাচ্ছেন না। শুধু রাজধানীতেই নয়। সারাদেশের নগর ও শহর এলাকায় বর্তমানে মশার দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

গত মাসের শেষ থেকে দেশে ডেঙ্গু শনাক্তের হার দ্রুত বাড়ছে এবং তা শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত করতে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু পরীক্ষার বুথ স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে ঘরে বসে না থেকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে মশাবাহিত এ রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা কঠিন। সেই সঙ্গে এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজনন উৎস ধ্বংসে বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে সারা বছর পরিস্থিতি নজরে রাখেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার প্রজনন উৎস ধ্বংস করতে হবে।

মানুষের মধ্যে সচেতনা গড়ে তোলার পাশাপাশি ঘরে-বাইরের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। সর্বোপরি ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকার করোনা পরিস্থিতি যেভাবে মোকাবিলা করেছে, একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি ছিল একটি বৈশ্বিক সমস্য। অথচ ডেঙ্গু হচ্ছে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ যেখানে বেসামাল হয়ে পড়েছে, সেখানে বাংলাদেশ শক্ত হাতে হাল ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ রাস্তাঘাটে পড়ে মরে থাকবে বলে বিএনপি নেতারা যখন এমন আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় এক এক করে তৃতীয় ডোজ টিকা প্রদান শেষে এখন চতুর্থ জোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। করোনা এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার সংখ্যা এখন খুবই সীমিত। করোনার মতো অতিমারি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, তখন আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। করেনার প্রাদুর্ভাব পৃথিবীতে থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় দেয়া সম্ভব না হলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে বিদায় জানানো সম্ভব। কেননা শুধু মশা নিধনের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগকে বিদায় দেয়া যাবে। তবে এ জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ ও স্বাস্থ্য খাতে কর্মীদের আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন।