প্রসঙ্গ : গ্র্যাজুয়েটেড (স্নাতক) ড্রাইভার লাইসেন্সিং সিস্টেম

মিয়াজী আলমগীর আলম চৌধুরী

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে আজ দেশের সড়ক পথে এক বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার জন্য কয়জন দক্ষ বা স্মার্ট ড্রাইভার রয়েছে বাংলাদেশে, সেটা এখন এক জ্বলন্ত প্রশ্ন। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমার কোনো লক্ষণ নেই। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দক্ষ বা স্মার্ট ড্রাইভারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে দক্ষ বা স্মার্ট ড্রাইভার তৈরি করা যাবে। প্রকৃতপক্ষে দক্ষ ড্রাইভার হলেন তারাই যারা দেশের প্রচলিত ট্রাফিক আইন বুঝে, জানে, তা মনের মাঝে ধারণ করেন এবং বাস্তব জীবনে গাড়ি চালানোর সময় তার প্রয়োগ করেন। আমাদের এখন মাঠে নয় বরং সঠিক ড্রাইভিং শিখে রাস্তায় সরেজমিনে ড্রাইভিং করে দক্ষতা দেখিয়ে পাশ করতে হবে। আমাদের ড্রাইভারদের এখন রাস্তায় কোথায় কখন ঝুঁকি বা বিপদ থাকতে পারে তা শিখতে হবে। অর্থাৎ ড্রাইভিং পরীক্ষার সময় রাস্তায় কোথায় কখন ঝুঁকি বা বিপদ থাকতে পারে তার ঝুঁকি নির্ণয়ের দক্ষতা দেখিয়ে পাশ করতে হবে। আর এজন্যই আমাদের প্রচলিত ড্রাইভিং ব্যবস্থা বাদ দিয়ে গ্র্যাজুয়েটেড (স্নাতক) ড্রাইভার লাইসেন্সিং সিস্টেম বা আনয়ন করতে হবে। অপরপক্ষে, এই দক্ষ চালক তৈরিতে যাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি সেই বিআরটিএ’র এতে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বিআরটি গ্র্যাজুয়েটেড (স্নাতক) ড্রাইভার লাইসেন্সিং সিস্টেম পদ্ধতি চালু করলে যেমন দক্ষ ড্রাইভার তৈরি হবে তেমনি উন্নত ট্রাফিক সিস্টেমের দ্বার উন্মোচিত হবে। দালালদের দৌরাত্ম্যও কমে যাবে। হয়তো সব ড্রাইভারই গাড়ি চালাতে সবাই পারে। কিন্তু, ৩৬০ ডিগ্রি অর্থাৎ চতুর্দিক দেখে শুনে কয়জন ড্রাইভার গাড়ি চালাতে জানেন। সব রোড সাইন, ট্রাফিক আইন এইসব পরিপূর্ণভাবে শুধু জানলেই চলবে না, বরং রাস্তায় সরেজমিন ড্রাইভিং করে দক্ষতা দেখিয়ে ড্রাইভারদের পাশ করতে হবে। সাধারণত গ্র্যাজুয়েটেড (স্নাতক) ড্রাইভার লাইসেন্সিং সিস্টেমে তিনটি ধাপ বা পর্যায় থাকে।

যার মধ্য দিয়ে নতুন ড্রাইভার পাস করে। প্রথমত তারা একটি শিক্ষানবিশ পারমিট অর্জন করবে (লার্নার্স ড্রাইভিং লাইসেন্স)। এসময় তত্ত্বাবধানহীন অর্থাৎ ইনস্ট্রাক্টর ছাড়া ড্রাইভিং নিষিদ্ধ থাকে। এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ওপর লাল (খ) চিহ্নিত বোর্ড বসাতে হয়। দ্বিতীয়ত পাস করার পর এক বছরের জন্য একটি সীমাবদ্ধ, প্রবেশনারি (চ) বা অস্থায়ী লাইসেন্সে পায়। এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ীর উপর সবুজ (চ) চিহ্নিত বোর্ড বসাতে হয়। এই এক বছর রাত্রিকালীন, হাইওয়ে এবং এক্সপ্রেসওয়েতে ড্রাইভিং নিষিদ্ধ থাকে। তৃতীয়ত, যারা পাস করার পর এক বছর সফলভাবে গাড়ি চালাবে কোনোপ্রকার এক্সিডেন্ট রেকর্ড ছাড়া, তারাই শুধু একটি সম্পূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ড্রাইভিং লাইসেন্সিং পরীক্ষার মধ্যে জাপান অন্যতম। জাপানি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মূলত চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে একজন শিক্ষার্থী লার্নার্স ড্রাইভিং লাইসেন্স পান, দ্বিতীয় ধাপে একটি ড্রাইভিং কোর্স সম্পন্ন করেন, তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন এবং চতুর্থ ধাপে সরেজমিন ড্রাইভিং পরীক্ষায় অংশ নেন। অর্থাৎ এটা ধরে নেয়া যায় যে, যে জাতি যত বেশি উন্নত সে জাতি তত বেশি শক্ত ট্রাফিক রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বেশিদূর যেতে হবে না, আমাদের দেশে ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরের রাস্তা যে কত সুশৃঙ্খল তা আমরা সবাই জানি। আমরাও আশা করি যানবাহন পরিচালনার সেনানিবাস মডেলের এই নিয়ম ও সুশৃঙ্খলতা আমরা সারা দেশেই ছড়িয়ে দিতে পারব। প্রয়োজন শুধু ড্রাইভারদের একটু দক্ষ করে তোলা। এই পদ্ধতি চালু হলে আমরাও বাংলাদেশে উন্নত বিশ্বের মতো ট্রাফিক সিস্টেম দেখতে পাবো বলেই আমাদের বিশ্বাস।

লেখক : আইনজীবী আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড সেফটি ভলান্টিয়ার্স