ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির এক দফা আন্দোলন

রাজনৈতিক বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন
বিএনপির এক দফা আন্দোলন

রাজপথের রাজনৈতিক দল বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্য নিয়ে আজ রাজধানীতে এক সমাবেশের আয়োজন করেছে। এই সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ডাক দেয়া হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। বিএনপির দাবি, তাদের সঙ্গে অন্তত ৩৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। তাদের নিয়েই বিএনপির নেতৃত্বে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু হবে। এক দফার এই আন্দোলন কখন কীভাবে শুরু করা হবে এবং আন্দোলনের গতিবিধি কেমন হবে, তা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি। বিএনপির এক দফার আন্দোলনের ভিত্তি কী হবে, তাও পরিষ্কার নয়। অতীতের কোন আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি আগামী দিনে আন্দোলন গড়ে তুলবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, এরশাদবিরোধী আন্দোলন যেভাবে গড়ে উঠেছিল, সেই আঙ্গিকে বাংলাদেশে এক দফার আন্দোলন গড়ে তোলার মতো রাজনৈতিক শক্তি ও সামর্থ্য কার্যত বিএনপির নেই।

বিএনপি সরকার পতনের ডাক দিয়ে ইতোমধ্যে পদযাত্রার নামে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রেখেছেন। এসব সমাবেশে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে যেসব সমালোচনা করছেন, তার নেপথ্যের কারণ ছিল বৈশ্বিক সমস্যা। আর এসব সমস্য নিরসন করা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পক্ষেও সম্ভব নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেল ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে পারেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারবিরোধী যুগপৎ এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শরিক রাজনৈতিক দল ও জোট আলাদাভাবে এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেবে বলেই জানানো হয়েছে।

বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে আন্দোলনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোনো নেতা কার্যত নেই। পলাতক আসামি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেখা দেয়ার পরও তিনি বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন কি-না সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইন-আদালতের পক্ষ থেকে জাতি জানতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের পরিবর্তে বাসায় থাকছেন। তার সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল মাঝে মাঝে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মতো শারীরিক সুস্থতা ও আইনগত বৈধতা তার নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাতেগোনা কয়েকজন নেতাই এখন বিএনপির সম্বল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তখন এরশাদের জাতীয় পার্টিই ছিল একমাত্র ভরসা। সেই সময় জাতীয় পার্টি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের এমন কোনো তৎপরতা ছিল না যে, রাজপথে তখনকার আন্দোলন মোকাবিলা করবে। সে সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামির এক বড় ভূমিকা ছিল। আর এখন বিএনপির সঙ্গে যেসব দল নাম লেখিয়েছে, তাদের নামের তালিকার লিখিত কাগজ ছাড়া দেশের মানুষকে অবহিত করা সম্ভব নয়। এসব খুচরা দল নিয়ে আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী দলের মোকাবিলা করা এই মুহূর্তে বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের এমন কোনো ইউনিয়ন নেই, যেখানে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শক্তিশালী কমিটি নেই। তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলন জমানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। এটা হয়তো বিএনপি জানে। তারপরও নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। আগামী দিনগুলোই বলে দেবে বিএনপি ও তাদের জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন কোথায় গিয়ে থামে। এটা ঠিক যে, আওয়ামী লীগও বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। আজ আওয়ামী লীগও রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করবে। আওয়ামী লীগের ভাষায়, বিএনপির নৈরাজ্য মোকাবিলা করে জনগণের যানমালের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তারাও আজ রাজপথে থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত