উদ্যোগটি প্রশংসনীয়

সমাবেশ করতে পুলিশের ২৩ শর্ত

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজপথের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের অন্যান্য শরিক দল গতকাল ‘সরকার পতনের’ এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশের আয়োজন করে। বিএনপি যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে- এমন আশঙ্কায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জনগণের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে একই দিন সাধারণত শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়। বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করার জন্য পাল্টা কর্মসূচি দেয়। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব সময় দাবি করা হচ্ছে, তারা বিএনপির সম্ভাব্য নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ডে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়, সে জন্যই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। একই দিন দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। গতকাল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কর্মসূচি পালনের সময় ঢাকায় অবস্থান করছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। একদিকে দেশে বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন- এ দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি পুলিশ দিয়েছে ২৩টি শর্তে। এসব শর্ত খুব সময়োপযোগী এবং এসব শর্তাবলির মধ্য দিয়ে পুলিশের পেশাদারিত্বের পাশাপাশি নিরপেক্ষতা বজায় রাখার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে সীমিত পরিসরে একটি সরকার দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। নির্বাচনকালীন সরকাররের সময় পুলিশকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

কেননা, বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পুলিশ বিএনপির চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বেশি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তবে গতকালের সমাবেশের আগে পুলিশ সমাবেশ করার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করার দায়িত্ব এই দুটি রাজনৈতিক দলের। পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে আর রাজনৈতিক দলগুলো কী করবে, সেটা তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে এদেশের জনগণ। পুলিশের এ ধরনের শর্ত পালন করে সভা-সমাবেশ ডাকা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা কোনো অবস্থায় চ্যালেঞ্জিং বিষয় নয়। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গতকাল দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি সমাবেশের ডাক দেয়। অন্যদিকে বিকেল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটসংলগ্ন স্থানে ‘শান্তি সমাবেশ’ আহ্বান করে আওয়ামী লীগ।

সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করে পুলিশের পক্ষ থেকে ২৩টি শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। এসব শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত হচ্ছে- অনুমোদিত স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে; স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে; নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং করতে হবে; নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে; ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে- এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না; অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে; কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না; আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- এমন কার্যকলাপ করা যাবে না; রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না; উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না; কোনো ধরনের লাঠিসোটা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না; আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

এসব শর্ত পূরণ করে যে কোনো রাজনৈতিক দল সভা-সমাবেশ ডাকলে সেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে না। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হবে না এবং সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ধরনের আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। পুলিশ যদি ভবিষ্যতে অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা প্রতিপালনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মত করাতে পারে, তাহলে সেটি হবে প্রশংসনীয়। এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সেটাই প্রত্যাশা করে।