ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আটকে গেল ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ

পেল জি-৭ জোটের নিরাপত্তা সহায়তা
আটকে গেল ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ

ইউক্রেন কখন ন্যাটোর সদস্য হবে, সে বিষয়ে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে অস্বীকার জানিয়েছে জোটের মিত্র রাষ্ট্রগুলো। ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো বলছে, যখন মিত্ররা সম্মত হবে এবং ইউক্রেন ন্যাটো জোটের শর্ত পূরণ করতে পারবে, তখনই জোটে যোগ দেবে। এক বিবৃতিতে ন্যাটো বলেছে, তারা এ ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছে। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে না। ন্যাটো বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকা অবস্থায় ইউক্রেন তাদের জোটে যোগ দিতে পারবে না। ন্যাটো জোটের নেতারা লিখিত ঘোষণায় বলেছেন, ‘যখনই মিত্ররা সম্মত এবং শর্ত পূরণ হবে, তখনই আমরা ইউক্রেনকে জোটে যোগদানের আমন্ত্রণ জানাব।’ ন্যাটোর এক বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ন্যাটো সৈন্যদের সঙ্গে কাজ করার জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনীর সক্ষমতার অগ্রগতি দেখতে হবে ন্যাটোকে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ও নিরাপত্তা খাত সংস্কারেরও প্রয়োজন রয়েছে। সামরিক ন্যাটো জোটের সঙ্গে ইউক্রেন কবে নাগাদ যুক্ত হতে পারে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

জেলেনস্কি দাবি করে আসছেন, রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকানোর একমাত্র উপায় হলো ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান। ন্যাটোর চার্টার অনুসারে, জোটের যেকোনো একটি দেশ আক্রমণের শিকার হলে তা পুরো জোটের বিরুদ্ধে হামলা বলে মনে করা হয়। বুধবার লিথুনিয়ায় ন্যাটো সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, তার তিনটি অগ্রাধিকার রয়েছে- নতুন অস্ত্র প্যাকেজ, ন্যাটোতে যোগদানের আহ্বান এবং ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। ইউক্রেনে ন্যাটোর যোগদানের সময়সীমা ঘোষণা না করা অপ্রত্যাশিত ও অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন জিলোনস্কি। ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগ দেয় তবে সামরিক জোটটি আরও শক্তিশালী হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা তাদের পরিকল্পিত প্রতিশ্রুতিকে নিরাপত্তার আশ্বাস হিসেবে উল্লেখ করছেন। এদিকে রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রভাবশালী নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে ন্যাটো। লিথুনিয়ায় দুই দিনের ন্যাটো সম্মলনের প্রথম দিনে মঙ্গলবার জোটের কয়েকটি দেশ কিয়েভকে আরও সামরিক ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া প্রসঙ্গে মেদভেদেভ বলেন, ‘পশ্চিমাদের সহায়তা রাশিয়াকে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন থেকে সরাতে পারবে না।’

পুতিনের এই ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘পশ্চিমারা ভালো কিছু বয়ে আনতে পারেনি এবং পরিস্থিতি শেষ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে নিজেদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে দাবি করে আসছে মস্কো। তবে ন্যাটোসহ অন্যান্য দেশের মিত্ররা একে রাশিয়ার আগ্রাসন হিসেবে দেখে। ইউক্রেনকে পর্যাপ্ত সামরিক, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দিচ্ছে দেশগুলো। যতদিন প্রয়োজন সহায়তা অব্যাহতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিত্ররা। এদিকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে বাইডেন প্রশাসনের বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা দেয়ার ঘোষণায় মিত্রদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে, এটি বিপজ্জনক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। কেননা, এই ক্লাস্টার বোমা অনেক দিন এমনকি বছরের পর বছর অক্ষত থাকায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইউক্রেনকে দেওয়া গোলাবারুদের মজুত ফুরিয়ে আসায় এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুমোদন করতে যাচ্ছে বিশ্বের সাত বৃহৎ অর্থনীতির দেশকে নিয়ে গঠিত জি-৭ জোট। বুধবার ন্যাটো সম্মেলনে জোটের সদস্যরা এই প্রত্যাশার কথা জানান। শিগগির এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। দীর্ঘমেয়াদি এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, চুক্তিটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে একটি ‘শক্তিশালী সংকেত’ পাঠাবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটোতে যোগদানের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করতে বলার পরই এ ঘোষণাটি এলো। সুনাক বলেছেন, ‘কিয়েভের মিত্ররা দীর্ঘমেয়াদে ইউক্রেনকে রক্ষা করার আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে যা ঘটেছে, আমরা কখনোই তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত