অভিমত

দূষণযুক্ত খাবার থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখতে হবে

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিশুরা প্রতিটি মুহূর্তে নিজেদের মেধা বিকাশে নানা ধরনের বাধার মুখোমুখি হচ্ছে। মানসিক ও শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আজ আমাদের শিশুরা ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে, শরীরের পুষ্টি ঠিক থাকছে না। নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠান্ডা কাঁশি, এলার্জি, মুটিয়ে যাওয়া, থাইরয়েড সমস্যা, হরমোনজনিত সমস্যা, চোখের সমস্যা, হজমে সমস্যা, খাওয়ায় অনীহা, শ্বাস-প্রশ্বাসে ত্রুটি ইত্যাদি রোগের সঙ্গে বেড়ে উঠছে। এই শিশুদের নিয়েই আমরা স্বপ্ন দেখি যে, তার অন্তরে পিতা ঘুমিয়ে আছে। এই ভগ্নদেহের শিশুরা কতটা সাবলীলভাবে তার এই দেহ টেনে নেবে? অসুস্থতা মন-মনন বিকাশের অন্তরায়- একথা কেউ অস্বীকার করবে না। কেন ঘটছে এমনটি? প্রথম কারণ হচ্ছে শিশুর খাদ্যভাস। শিশুদের যা খাওয়াচ্ছি তা কতটা খাদ্য হিসেবে গ্রহণীয় তাই এখন বড় প্রশ্ন। কী খাওয়াচ্ছি আমাদের শিশুদের? দুধ শতকরা ৯০ ভাগ ভেজাল (বেশি দুধ দেওয়ার জন্য গরুকে নানান ওষুধ খাওয়ানো হয়), যা বিষ। চাল (পলিশ করা)- চালের যত ধরনের মিনারেল আছে তা থাকে চালের আবরণের ওপর অথচ তা ফেলে দিয়ে শুধু শর্করা রেখে শিশুর হজম প্রক্রিয়াকে চিরতরে নষ্ট করা হচ্ছে।

আটা বা ময়দা-চালের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে গমের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এতে গ্লুটেন শিশুকে মোটা করে দেওয়ার কাজ করে। ফল- দেশের ফলের মধ্যে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত রাসায়নিক ব্যবহার স্তরে স্তরে, যার দরুন ফল বিষময়। মাছ- বেশি দিন তাজা রাখার জন্য মাত্রারিক্ত রাসায়নিক দেয়ার ফলে মাছ আর খাদ্য হিসেবে নেই, মাসের পর মাস মাছ পচে না, বাজারের মাছে মাছি বসে না (মাছিও সেই মাছ ধরে না)। মুরগির মাংস শিশুদের প্রিয় খাবার। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মুরগি বেড়ে উঠলে ফার্মওয়ালাদের লাভ হয় না বলেই তারা বলে থাকে। তাই তারা নানান হরমোন দিয়ে অতিদ্রুত বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক দিয়ে বড় করে, যা সরাসরি বিষ! চকলেট, চিপস, বিস্কুট, ফাস্টফুড, রং মিশ্রিত নানান খাবার শিশুর স্বাস্থ্য গড়তে দেয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পাকস্থলীতে ঘা বা আলসারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। জুস, চিপস, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই, টেস্টিং সল্ট ও ফাস্টফুডে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে। যেসব শিশু এসব খাবার খায়, তারা ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকে, আবার পেটে ব্যথা দেখা দেয়। এসব কেমিক্যালযুক্ত খাবার শিশুরা অব্যাহতভাবে খেতে থাকলে কিডনি ও অন্ত্রে ক্যান্সার হতে পারে। এটা হওয়ার আশঙ্কা ৯৫ ভাগ। এছাড়া এক সময় পাকস্থলী ছিদ্র হতে পারে। পাশাপাশি আক্রান্তদের মেজাজ খিটখিটে হয়। অধিকন্তু এসব খাদ্য শরীরের উপকারী জীবাণু নষ্ট করে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। হজমশক্তি হ্রাস পায়। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বর্তমানে শিশু ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ নানা ধরনের দূষণযুক্ত খাবার। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী জনবল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। পাশাপাশি কেমিক্যালযুক্ত খাবার শিশুদের জিনগত পরিবর্তন করে ক্যান্সার সৃষ্টি করছে। দূষিত খাবারে বাচ্চাদের দেহকোষ, মস্তিষ্ক, কিডনি ও লিভার সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেখা দিচ্ছে হাঁপানি রোগ, তাদের রক্ত চলাচলেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় শিশুদের আচরণগত সমস্যার জন্যও ভেজাল খাবারকে দায়ী করা হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল আমাদের দেশে একটি ভয়াবহ সমস্যা। কিছুতেই এটা থামানো যাচ্ছে না। ফলে সব বয়সি মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। ফলে আজকাল বাবা-মাকে শিশুর জন্মের আগে থেকেই তার নিরাপদভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে থাকতে হয় দুশ্চিন্তায়। আমরা ধারণা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে সচেতন। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা অবশ্যই তাদের স্পর্শ করে। সংগত কারণেই শিশুর জন্য দুশ্চিন্তামুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে তারা আরও সক্রিয় হবেন- তা প্রত্যাশা করা যায়। কিছুতেই কেমিক্যালযুক্ত খাবার বাজারজাত করতে দেয়া যাবে না। মা-বাবাকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। দুষণযুক্ত খাবার কিছুতেই শিশুর হাতে তুলে দেয়া যাবে না। এই নিয়ে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক তৎপরতার কথাও ভাবতে হবে।