ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা

পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত
ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা

ইউক্রেনে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাস্টার বোমা। এই মারণাস্ত্র কিয়েভে পাঠানো নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও ইউক্রেনে এই বোমা পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে। ক্লাস্টার বোমা হলো একটি বড় বোমার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট বোমা। ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ক্লাস্টার বোমার একটি অংশ প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরিত হয় না, তবে পরে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে মানুষ মারাত্মকভাবে আহত কিংবা নিহত হতে পারে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে, ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গুচ্ছ বোমার আঘাতে লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে কিংবা তারা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। হতাহতদের ৯৮ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। অবিস্ফোরিত বোমার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকায় সবচেয়ে মারাত্মক শিকার হয় শিশুরা। মাটিতে পড়ে থাকা ছোট বোমাকে শিশুরা খেলনা ভেবে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ক্লাস্টার অস্ত্রের ব্যবহারকে ‘ঘৃণ্য’ এবং এমনকি ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসাবেও বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ক্লাস্টার বোমা ‘সংঘাত শেষ হওয়ার অনেক সময় পরও বেসামরিক মানুষের জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে থাকে’। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়াশিংটনের পরিচালক সারাহ ইয়াগার মার্কিন এ পদক্ষেপকে ‘বিধ্বংসী’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, ‘এসব বোমা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য একেবারেই ভয়ঙ্কর’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনের গোলাবারুদ ফুরিয়ে’ আসছে। এ কারণে তিনি ‘পরিস্থিতির বিবেচনা’ করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার এ সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও স্পেন জানিয়েছে তারা এ অস্ত্র ব্যবহারের বিরোধী এবং জাতিসংঘও এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্রবিষয়ক কনভেনশনে সই করা ১২৩টি দেশের অন্যতম যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তারা এ জাতীয় অস্ত্র উৎপাদন বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

কানাডা সরকার বলেছে, তারা শিশুদের ওপর এই বোমার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবলেস বলেছেন, এ ধরনের বোমা ইউক্রেনে পাঠানো যাবে না বলে তার দেশ অবস্থান নিয়েছিল। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ‘ক্লাস্টার বোমার ক্ষেত্রে সামরিক জোট কোনো অবস্থান নেয়নি।’ ইউক্রেনকে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা দেওয়ায় পূর্ব-এশিয়ার দেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে ‘মানবিক সমস্যা’ দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, মার্কিন সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে পুরো বিশ্বে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন, ‘তার দেশের ভূখণ্ড দখলমুক্ত করতে এই অস্ত্র সহায়তা করবে।’ তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘কিয়েভ এই অস্ত্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে ব্যবহার করবে না।’ তবে এই অস্ত্র তার দেশের সেনাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইউক্রেন সংঘাত দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে কিয়েভকে ক্লাস্টার বোমা সরবরাহ করার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত একটি আগ্রাসী নীতির উদাহরণ। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সদস্য বারবারা লি জো বাইডেনের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেন। মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট সদস্য বেটি ম্যাককোলাম বলেন, এটি ‘ভয়ংকর ভুল’ হবে। ম্যাসাচুসেটসের আরেক ডেমোক্র্যাট সদস্য ম্যাক গোভার্ন বলেন, সংঘাত শেষ হয়ে গেলেও এ ধরনের দীর্ঘদিন অবিস্ফোরিত বোমা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিরাট ঝুঁকির। মানব সভ্যতার জন্য ঝুঁকি এবং এর ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে ২০০৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ করা হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ক্লাস্টার বোমা উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া ওই চুক্তিতে সই করেনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত