ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আন্দোলনে শিক্ষক-চিকিৎসক

শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
আন্দোলনে শিক্ষক-চিকিৎসক

নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে রাজধানীর রাজপথে শিক্ষক ও চিকিৎসকরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে তাদের এই আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। পেশাজীবী এই দুই শ্রেণির সদস্যরা তাদের নিজ নিজ দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে আসায় তাদের কর্মক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অবস্থান কর্মসূচি পালনের কারণে ব্যস্ত শহর ঢাকায় প্রতিদিন যানজট পরিস্থিতি পুলিশের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে স্কুলে মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ ও পাঠদান ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনিতে নড়বড়ে। তার ওপর শিক্ষকরা শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে এলে ছাত্ররা কোথায় যাবে- তা নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অঘোষিতভাবে শিক্ষাদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষক নেতাদের বক্তব্য- একই কারিকুলামের অধীনে একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাদের বক্তব্য, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

এ অবস্থায় দেশ ও জনগণের বৃহৎ স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো-আইএলওর সুপারিশ বাস্তবায়ন ও সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষার বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোনো বিকল্প নেই। ১১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এদিকে চিকিৎসকরা রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন। এমন অবস্থায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি অপারেশন ও পূর্বনির্ধারিত দিনে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া তারিখ উত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন করে তারিখ নেয়ার মতো বিড়ম্বনায় পড়ছেন নিয়মিত রোগীরা। অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি জরুরি অপারেশনও বন্ধ থাকায় মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এছাড়া বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে মানুষের উদ্বেগ আরো বেড়ে গেছে। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক না পেলে রোগীরা হতাশ হয়ে যায়। ২০ হাজার টাকার স্থলে ভাতার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।

ভাতা বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে আসছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর শহীদ মিনার এলাকায় তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। এদিকে ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দুই নারী চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে চিকিৎসকদের সব ধরনের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধ রাখা হয়। তবে এই দুই চিকিৎসককে গতকাল জামিন দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক এবং চিকিৎসকরাও সংসার পরিচলনা করেন। তাদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত যৌক্তিক দাবিদাওয়া যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা হবে ততই মঙ্গল। কেননা তাদের ওপর নির্ভর করছে দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের বিষয়টি। সরকারের তরফ থেকে যতদূর সম্ভব আন্তরিকতা দেখানো উচিত। পেশাজীবী এই দুটি সংগঠনের নেতাদেরও অনুধাবন করতে হবে বাস্তব ক্ষেত্রে তাদের দাবিদাওয়া পূরণ করা কতটা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে উদার মনমানসিকতার পরিচয় দিয়ে যত শিগগির এই সংকটের সমাধান হবে, জাতির জন্য ততই মঙ্গল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত