সর্বজনীন হোক ডোপ টেস্ট

অবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে বিধিমালা

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি চাকরি কিংবা পেশাদার ডাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। শুধু সরকারি চাকরি কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট সীমাবদ্ধ না রেখে এই পরীক্ষা সর্বজনীন করা দরকার। কেননা, একজন মানুষ মাদকাসক্ত কি-না সেটা পরীক্ষা না করে তাকে কোনো কর্মে নিয়োজিত করা হলে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির মধ্যে স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনার অভাব পরিলক্ষিত হয়। সে মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তরা সমাজে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় মানুষ চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করে না। সে কারণে ডোপ টেস্ট করার ওপর গুরুত্ব দেয়া এখন অনেকটাই জরুরি হয়ে পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত করতে মাদকাসক্তি পরীক্ষা বা ডোপ টেস্ট করতে বিধিমালা প্রণয়ণ নানা কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। ২০১৮ সালে আইন পাস হলেও গত পাঁচ বছরে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়নি। ফলে সরকারি-বেসরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মাদকাসক্তি পরীক্ষা বৃহত্তর পরিসরে হচ্ছে না। সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ একটি ডোপ টেস্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় কত টাকায়, কোন হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করা যাবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এ অবস্থায় নতুন নিয়োগ পাওয়া সরকারি চাকরিজীবী এবং সব ধরনের গাড়িচালককে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে কয়েকটি হাসপাতালে। নির্ভরযোগ্য গবেষণা না থাকলেও মানুষের ধারণা, গাড়িচালকদের একটি অংশ মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালায়। ফলে চালক গাড়ি চালানোর সময় বেসামাল হয়ে পড়ে। চালকদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে। সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় সরকার একে গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেছে। ২০২০ সালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাড়িচালকদের জন্য মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছিলেন। এর আগে ২০১৮ সালে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার সরকারি যেকোনো চাকরিতে যোগদানের আগে অবশ্যই ডোপ টেস্ট করতে হবে। দেশের সব হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করার সক্ষমতা নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডোপ টেস্ট বিধিমালা প্রণয়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল। সুরক্ষা বিভাগ তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ খসড়া বিধিমালাটি সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠায়। এর পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর সংশোধিত বিধিমালাটি আবার সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠায়। এখন তা সুরক্ষা সেবা বিভাগে আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি এখন একনেকের তালিকাভুক্ত হয়ে আছে। প্রকল্পটি পাস হলে বিধিমালা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবন রোধে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ প্রয়োগ করা হয়। আইনটি করা হয় ১৯৯০ সালে। ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এই ধারায় বলা আছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আদালত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারবেন। তিনি চিকিৎসা গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া যেতে পারে। কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নবনিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ও গাড়িচালকদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। জনবলের অভাবে সরকারি সব মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে ডোপ টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য বেসরকারি চাকরিজীবীদেরও ডোপ টেস্ট করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে কয়েকটি হাসপাতালেও ডোপ টেস্ট চলছে। বিধিমালা না হওয়ায় নিজ নিজ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তবে যত তাড়াতাড়ি ডোপ টেস্ট সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন হবে, ততই তা জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।