ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব-কলহ

করুণ পরিণতির শিকার সন্তানরা
বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব-কলহ

আমাদের সমাজে পরিবারিক জীবনে নানা দ্বন্দ্ব-বিবাদের কারণে অনেক রক্তারক্তি ও নানা অঘটন ঘটে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক হচ্ছে- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিংবা বিরোধ। তাদের বিরোধের সরাসরি প্রভাব পড়ে তাদের অসহায় সন্তানদের ওপর। কোনো সন্তানই তার পিতামাতার মধ্যেকার ঝগড়া বিবাদ কিংবা অবনতিশীল সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। বাবা-মায়ের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে সন্তানের সরাসরি কোনো ভূমিকা থাকে না। তারা বাবা-মাকে নিবৃত্ত করতে না পেরে অসহায়ত্ব বোধ করে। ফলে তাদের মনোজগতের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাবা-মায়ের অবনতিশীল সম্পর্কের কারণে অনেক সন্তান বিপদগামী হয়ে যায়। সে স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত না হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন শুরু করে। বাবা-মায়ের তদারকির অভাবে সে এক পর্যায়ে মাদকে আসক্তি হয়ে যেতে পারে। ফলে বাকি জীবনটা তার এক গভীর অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার অবনতিশীল সম্পর্ক নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ভালো। তাদের নিজেদের আচার-আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গেলে সন্তানরা তা সহজেই মেনে নিতে পারে না। তারা কোনো কিছু করতে না পেরে দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের লেখাপড়া ও মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে তা নিজেরা বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

নিজেরা না পারলে তারা তাদের নিজ নিজ অভিভাবকদের সহায়তা নিতে পারেন। অভিভাবকদের কাছে কোনো কিছু অস্বাভাবিক মনে হলে তা যাচাই-বাছাই করা উচিত। এমনকি দুইজনকে একত্রিত করে একটা মঙ্গলজনক সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। বিষয়টি যত সময় গড়াবে, ততই তা একটা পরিবারের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে। স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক দ্বন্দ্বে না খেয়ে ৮ দিনের এক নিষ্পাপ শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। ৮ দিনের আদরের সন্তানটি মায়ের দুধ খেতে না পেরে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। খবরে বলা হয়েছে, গত বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকার বনশ্রী মোড়ের শাহজাহান খানের ভাড়াটিয়া বাসায় ওই শিশুটি মারা যায়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় রাজীব হোসেনের সঙ্গে তার স্ত্রী ফারজানার ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ১৪ মাস বয়সি ছেলে ও আট দিনের কন্যাসন্তান রেখে ফারজানা তার বোনের বাসায় চলে যান। এরই মধ্যে অসহায় পিতা ছেলেটিকে খাওয়াতে পারলেও কন্যাকে কোনো কিছু খাওয়াতে পারেননি। গত বুধবার রাতে আট দিনের কন্যা শিশুটি নিথর হয়ে পড়লে রাজীব তার স্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। তবে ফারজানার অভিযোগ, তার স্বামী রাজীব দুইটি শিশুসন্তান রেখে মারধর করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরের দিন মৃত সন্তান নিয়ে তার কাছে যান রাজীব। তবে রাজীব জানান, জিদ করে ফারজানা বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে খাবার না পেয়ে কন্যাসন্তান মারা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক এসআই জিয়াউর রহমান জানান, এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কি ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কিত খবর গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানা যায়নি। পুলিশ যে ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিক না কেন- একটি নিষ্পাপ শিশু এভাবে অকালে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে তা কেউ কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। শিশুটির পিতা-মাতার মনের মধ্যে কোনো ধরনের অপরাধ বোধ সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তাও জানা যায়নি। শুধু জেদের বশবর্তী হয়ে একজন মায়ের শিশুসন্তান রেখে অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেছে বলে জানা নেই। তবে আমাদের সবার প্রতাশা থাকবে- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার বিরোধ তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে. যাতে করে তাদের সন্তানরা এমন নির্মম পরিণতির শিকার না হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত